logo
খবর

আহা, কুমিল্লার মাতৃভাণ্ডারের রসমালাই!

বাসস, ঢাকা১২ অক্টোবর ২০২৪
Copied!
আহা, কুমিল্লার মাতৃভাণ্ডারের রসমালাই!
কুমিল্লার মাতৃভান্ডার এর প্রকৃত দোকান ।

কুমিল্লার রসমালাইয়ের সুখ্যাতি দেশজোড়া। এ জেলায় এসে রসমালাইয়ের স্বাদ নিতে চাননি এমন লোক পাওয়া ভার। দেশের সব মিষ্টি দোকানেই কম-বেশি রসমালাই পাওয়া গেলেও এখনও চাহিদার শীর্ষে কুমিল্লার মাতৃভাণ্ডারের রসমালাই।

নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় থেকে মাত্র দুশ গজ পূর্বে মনোহরপুরে এলাকায় মাতৃভাণ্ডার রসমালাই দোকান। ১৯৩০ সালে এর যাত্রা শুরু হলেও এখনো হারায়নি নিজস্ব সত্ত্বা। একটুও কমেনি এই রসমালাইয়ের কদর। বরং বিভিন্ন জেলার মানুষ ছুটে আসছেন মাতৃভাণ্ডারের রসমালাইয়ের খোঁজে। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গভবন ও গণভবনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আতিথেয়তায় দেয়া হতো এই মাতৃভাণ্ডারের রসমালাই। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার দুই সাবেক রাষ্ট্রদূতও এর স্বাদ নিতে ছুটে এসেছিলেন এখানে।

এখন অবশ্য মাতৃভাণ্ডারের নাম দিয়ে কুমিল্লাসহ সারা দেশে ভরে গেছে চাকচিক্যময় শো-রুম। শুধু লোগো ও সাইনবোর্ড লাগিয়েই দেদারছে বিক্রি হচ্ছে নকল মাতৃভাণ্ডারের মিষ্টি। তবে ভেজালের ভিড়েও মনোহরপুরের পুরোনো টিনের ঘরের আসল রসমালাই ঠিকই খুঁজে নিচ্ছেন ক্রেতারা। এর চাহিদা সব সময়ই থাকে। তবে বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে বাড়তি ক্রেতার ভিড় সামলাতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়। ক্রেতাদের লম্বা সারির কারণে প্রায় সময় মনোহরপুর-রাজগঞ্জ সড়কে যানজট লেগে যায়।


শুরুর কথা
কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য গবেষক অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক বলেন, ১৯ শতকের শুরুর দিকে শহরের রাজগঞ্জ বাজারের পূর্বদিকে গোয়ালপট্টিতে গরুর খাঁটি দুধ দিয়ে দই, মাখন, মাঠা ও ঘি তৈরি করতেন ঘোষরা। এগুলো বিক্রি করে তারা কিছুটা আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করেন। সময়ের ব্যবধানে সেখানে তাদের প্রচেষ্টায় দই জাতীয় মিষ্টি তৈরি শুরু হয়। ১৯৩০ সালে মনোহরপুরে কৈলাশ ভবনের মালিক ইন্দুভূষণ দত্তের কাছ থেকে জায়গা নিয়ে মাতৃভান্ডার নামে মিষ্টান্ন দোকান প্রতিষ্ঠা করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই সহোদর খনিন্দ্র সেনগুপ্ত ও মণীন্দ্র সেনগুপ্ত। সেখানে তারা প্রথমে ছানার মিষ্টি তৈরি শুরু করেন, যা ক্ষীরভোগ নামে বিক্রি হতো।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর এর আকৃতি পরিবর্তন করে নামকরণ করা হয় ‘রসমালাই’ নামে। সেই থেকেই চারিদিকে এর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এক সময় এটি ব্র্যান্ড হয়ে যায়। মাতৃভাণ্ডারের প্রতিষ্ঠাতা দুই ভাইয়ের মধ্যে মণীন্দ্র ছিলেন অবিবাহিত। দুই ভাইয়ের মৃত্যুর পর ১৯৪০ সালে এর দায়িত্ব নেন খনিন্দ্রের ছেলে শঙ্কর সেনগুপ্ত। ২০১৮ সালে শঙ্কর সেনের মৃত্যুর পর মাতৃ ভাণ্ডারের সত্বাধিকারী হন অনির্বাণ সেনগুপ্ত। তিনি প্রয়াত খনিন্দ্র সেনগুপ্তের নাতি।

অনির্বাণ সেনগুপ্ত জানান, সেখানে আগে থেকেই কাত্যায়নী কালিবাড়ী নামে একটি প্রসিদ্ধ মন্দির রয়েছে। মূলত মন্দিরের কালী থেকে মায়ের নামটি নিয়ে এর নামকরণ হয়েছে মাতৃভাণ্ডার।

যে কারণে সুখ্যাতি
মনোহরপুরে রসমালাই তৈরির কারখানার আশপাশের গেলে যে কারোরই জিভে জল আসতে বাধ্য। চুলা থেকে ধোঁয়া ওঠা রসমালাইয়ের মিষ্টি সুবাস সব সময়ই বাতাসে ভেসে বেড়ায়। সারাক্ষণই থাকে কারিগরদের ব্যস্ততা। কেউ ছানা তৈরি করছেন। আবার কেউ দুধের ঘন ক্ষীরে ছানা মেশাচ্ছেন। কেউ রসমালাই বক্সে নিয়ে ঢাকনা লাগাচ্ছেন। মূল দোকানে সব সময়ই থাকে ক্রেতার ভিড়। ভিড়ের মধ্যেও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে তাদের রয়েছে বাড়তি সচেতনতা।

মাতৃভাণ্ডারের প্রধান কারিগর তপন চন্দ্র দে জানান, তিনি প্রায় ৪২ বছর ধরে কাজ করছেন এই প্রতিষ্ঠানে। রসমালাই তৈরির জন্য গরু যাচাই করে দুধ সংগ্রহ করা হয়। কাপড়ে দুধ ছাঁকার পর ফুটানো হয়। ঘন হতে হতে এক সময় তা প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। সাথে পরিমাণ মতো মেশানো হয় চিনি। রসমালাইয়ে থাকা মিষ্টির মতো অংশ ছানাও দুধ দিয়ে তৈরি করা হয়। বর্তমানে এখানে রয়েছেন ২৫ জন অভিজ্ঞ কারিগর। গুণগত মান নিয়ে কোনো আপোস করা হয় না। এ কারণে ৩৬ ঘণ্টায়ও নষ্ট হয় না এ রসমালাই।
ঢাকার দোহার থেকে কোটবাড়ীতে এসেছিলেন ব্যবসায়ী গোলাম দস্তগীর রাসেল। তিনি জানান, কুমিল্লায় এসে তার প্রধান লক্ষ্য ছিলো মাতৃভাণ্ডারের খাঁটি রসমলাই খুঁজে বের করা। সে অনুযায়ী মনোহরপুরের মাতৃভান্ডারে এসেছেন এবং কাঙ্ক্ষিত জিনিসের সন্ধান পেয়ে তিনি খুশি। আরেক ক্রেতা আফরোজ আক্তার বলেন, আসল রসমালাই কিনতে মনোহরপুরে আসি। মাতৃভাণ্ডার ছাড়া রসমালাই কিনে তৃপ্তি পাই না।

কুমিল্লা মিষ্টি প্রস্তুতকারী সমিতির সভাপতি মামুনুর রশীদ বাসসকে বলেন, আমাদের সমিতির সদস্য নগরীর ৩২টি প্রতিষ্ঠান। এর বাইরেও অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রায় সব গুলোতেই রসমালাই তৈরি হয়। এগুলোর স্বাদও প্রায় কাছাকাছি। তবে মাতৃভাণ্ডারের রসমালাই ভোক্তাদের কাছে এখনও অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান বলেন, কুমিল্লার খাদি ও রসমালাইয়ের বিশ্ব বাজার ধরার মতো মান রয়েছে। এজন্য বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করতে হবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাবে।

নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা
মাতৃভাণ্ডারের নাম ব্যবহার করে কুমিল্লা সদরসহ জেলার বাজারগুলোতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে শতাধিক প্রতিষ্ঠান। নামের আগে পরে আদি ও আসলসহ নানা শব্দ যুক্ত সাইনবোর্ড লাগিয়ে বলা হচ্ছে কুমিল্লার মাতৃভাণ্ডার। যদিও মূল শহরে মাতৃভাণ্ডার নামে কোনো দোকান নেই। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত প্রতিটি স্টেশনের দুই পাশেই নকল মাতৃভাণ্ডারের ছড়াছড়ি। তাদের কারসাজিতে প্রতারিত ক্রেতার সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। যেখানে মাতৃভাণ্ডারের রসমলাই প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা, সেখানে তারা বিক্রি করছেন ২৫০ টাকায়। আর মানের দিক থেকেও আকাশ-পাতাল ব্যবধান। মূল মাতৃভাণ্ডার কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের কোনো শাখা নেই।

মালিকপক্ষের মন্তব্য
মাতৃভাণ্ডারের বর্তমান স্বত্বাধিকারী অনির্বাণ সেনগুপ্ত বাসসকে বলেন, নিজস্ব স্বত্ত্বা ধরে রাখায় প্রায় শতাব্দীকাল পরেও অপ্রতিদ্বন্দ্বী মাতৃভাণ্ডারের রসমালাই। তাই পারিবারিক ধারা রক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেও তিনি এ প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেছেন। গুনগত মানের কারণে হাজারও নকলের ভিড়ে এখানে ছুটে আসছেন ভোক্তারা।

অনির্বাণ আরও জানান, সাধারণত প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার কেজি রসমালাই বিক্রি হয়। তবে বিভিন্ন উৎসবে এর চাহিদা আরও বেড়ে যায়। অনেকেই বেশি করে নিতে চান। কিন্তু সীমাবদ্ধতার কারণে একজনকে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজির বেশি দেয়া হয় না। অবশ্য মাতৃভাণ্ডারের নাম ব্যবহার করা ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। তার মতে ভোক্তারা আসল পণ্য ঠিকই খুঁজে বের করছেন। কুমিল্লার রসমালাইয়ের সুখ্যাতি দেশজোড়া। এ জেলায় এসে রসমালাইয়ের স্বাদ নিতে চাননি এমন লোক পাওয়া ভার। দেশের সব মিষ্টি দোকানেই কম-বেশি রসমালাই পাওয়া গেলেও এখনও চাহিদার শীর্ষে কুমিল্লার মাতৃভাণ্ডারের রসমালাই।

আরও পড়ুন

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত

‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

২ ঘণ্টা আগে

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে বোর্ডিং ব্রিজ ও জিডিজিএস প্রথমবারের মতো ব্যবহার

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে বোর্ডিং ব্রিজ ও জিডিজিএস প্রথমবারের মতো ব্যবহার

রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের বোর্ডিং ব্রিজ ও ভিজ্যুয়াল ডকিং গাইডেন্স সিস্টেম (জিডিজিএস) প্রথমবারের মতো ব্যবহার করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট।

২ ঘণ্টা আগে

সত্য প্রকাশে একচুলও পিছপা হব না: আবদুল কাদের

সত্য প্রকাশে একচুলও পিছপা হব না: আবদুল কাদের

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেছেন, যে যা-ই বলুক, সত্য প্রকাশে তিনি একচুলও পিছপা হবেন না। সত্য আজ নয় কাল প্রতিষ্ঠা হবেই। সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে পিছপা হওয়া যাবে না। যে যা বলার বলুক।

২ ঘণ্টা আগে

প্রধান উপদেষ্টা আজ রাত ৮টা ২০ মিনিটে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন

প্রধান উপদেষ্টা আজ রাত ৮টা ২০ মিনিটে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাত ৮টা ২০ মিনিটে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।

৪ ঘণ্টা আগে