logo
খবর

গ্রিন লাইন পরিবহনের অপেশাদার আচরণে মধ্যরাতে ভোগান্তিতে প্রবাসী

বিডিজেন ডেস্ক
বিডিজেন ডেস্ক০৪ জানুয়ারি ২০২৫
Copied!
গ্রিন লাইন পরিবহনের অপেশাদার আচরণে মধ্যরাতে ভোগান্তিতে প্রবাসী
প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিন পর প্রবাস থেকে দেশে এসেছেন সিলেটের শাকিল আহমেদ। গত ২৩ ডিসেম্বর (২০২৪) কাতার থেকে আবুধাবি হয়ে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন। ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে লাগেজ নিয়ে বের হতে হতে তাঁর রাত সাড়ে ৮টা বেজে যায়।

তখন ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার কোনো ফ্লাইটও ছিল না। বাধ্য হয়ে অনলাইনে গ্রিন লাইন পরিবহনের ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার টিকিট কাটেন তিনি। মোবাইলে এসএমসের মাধ্যমে টিকিট কনফার্মের পর সোজা চলে যানে গ্রিন লাইনের রাজারবাগ কাউন্টারে। নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর ছাড়ে বাস।

তখনো শাকিল আহমেদ জানতেন না সামনে কী অপেক্ষা করছে তাঁর ভাগ্যে। বাস আরামবাগ কাউন্টারে যাওয়ার পর এক যাত্রী এসে দাবি করেন শাকিল আহমেদ যে সিটে বসেছেন সেই সিট তাঁর। এ সময় বাসের সুপাভাইজারও ওই যাত্রীর পক্ষ নিয়ে মধ্যরাতে
প্রবাসী শাকিল আহমেদকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন।

খবর ঢাকা পোস্টের।

এভাবেই গ্রিন লাইন পরিবহনের ‘অপেশাদার‘ আচরণে বর্ণনা দিয়েছেন কাতারপ্রবাসী শাকিল আহমেদ। তিনি এক যুগ ধরে কাতারে বাস করছেন এবং দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর অধীনে কর্মরত।

এ ঘটনায় নিজের নিরাপত্তাহীনতা ও ভোগান্তির কথা তুলে ধরে শাকিল আহমেদ বলেন, ‘দেশের প্রথম সারির একটি পরিবহন কোম্পানির এমন আচরণ চরম অপেশাদার ও অপ্রত্যাশিত। শুধু তাই নয়, একই সিটের টিকিট একাধিক যাত্রীর কাছে বিক্রি করা কীভাবে সম্ভব হয়?’

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে তিনি একটি অভিযোগও জানিয়েছেন।

এদিকে ভুক্তভোগী যাত্রীর সঙ্গে এমন আচরণের কথা স্বীকার করেছে গ্রিন লাইন পরিবহন। বিষয়টি নিয়ে ভোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব করা সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, গ্রিন লাইন পরিবহনের মতো নামিদামি বাস কোম্পানির কাছ থেকে এমন ঘটনা প্রত্যাশিত না। অবশ্যই তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

অন্যদিকে সরকারিভাবে ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষাকারী সংস্থা জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং সেই আলোকে সমাধান দেওয়া হবে।

শাকিল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি বাসে বসা ছিলাম। যখন আমাকে বলা হলো এই সিট আপনার না, তখন একটা ফ্যামিলি এসেছিল। সেই ফ্যামিলির টিকিট নম্বর ছিল এইচ-১, ২ ও ৩। যখন ফ্যামিলি এসেছে। তখন সুপারভাইজার আমাকে নামিয়ে নিতে নিতে বলল, আপনি কাউন্টারে চলেন আর ফ্যামিলিকে বলল আপনারা সিটে বসেন। কিন্তু ততক্ষণে কাউন্টার বন্ধ হয়ে গেছে। কাউন্টারে যারা কাজ করেন ততক্ষণে তারা বাইকে উঠে পড়েছে চলে যাওয়ার জন্য। আমি তাদের মোবাইলে পাওয়া মেসেজ আবারও দেখালাম। তখন তারা বলল, এটা কালকের। আমি তাদের বললাম এটা যদি কালকের টিকিট হতো, তাহলে ২৪ তারিখ লেখা থাকত। ২৩ তারিখ কীভাবে লেখা থাকে। তারা আবারও বলল, এটা কালকের টিকিট। তখন সুপারভাইজার আমাকে সাজেস্ট করল যে, আপনারা অনলাইনে টিকিট না কেটে, অফ লাইনে কাটবেন। কাতার থেকে এখানে আসা পর্যন্ত পুরো জার্নিতে আমি এতটাই ক্লান্ত আর বিরক্ত ছিলাম যে, এটা নিয়ে আর বেশি কথা বলিনি। পরে আমি একটি উবার নিয়ে বিমানবন্দরে চলে আসি।

green-line-ddd-20250103214214

ভুক্তভোগী শাকিল আহমদ ভোক্তা অধিকারের অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, ‘গত ২৩ ডিসেম্বর (২০২৪) রাতে এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটে দোহা থেকে আবুধাবি হয়ে আমি ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাই। সময় তখন রাত সাড়ে ৮টার পর হওয়ায় ঢাকা থেকে সিলেটগামী আর কোনো ফ্লাইট না থাকায় আমি অনলাইনে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসের টিকিট কিনি। যেটির বুকিং নম্বর (20241223034120874799)। তারপর যথাসময়ে আমি রাজারবাগে গ্রিন লাইনের বাস বোর্ডিং পয়েন্টে উপস্থিত হই। কিন্তু প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে বাস আসে। তারপর আমার মোবাইলে পাওয়া বুকিং মেসেজ দেখানোর পর আমাকে বাসে উঠতে দেওয়া হয়। কিন্তু আরামবাগ যাওয়ার পরপরই আমার সিটে (H-2) আরেকজন যাত্রী চলে আসেন এবং আমাকে গ্রিন লাইনের ওই বাসের সুপারভাইজার জানান, আমার টিকিট আগামীকালকের, তাই আমাকে নেমে যেতে হবে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ঢাকায় তখন রাত আড়াইটা। আমার সঙ্গে দুটো লাগেজ, যেগুলোতে বিদেশ থেকে কেনা স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিল। কিন্তু আমার কোনো অনুরোধ না রেখে আমাকে একরকম জোরপূর্বক রাস্তায় নামিয়ে দেন বাসটির সুপারভাইজার। অচেনা ঢাকায় মধ্যরাতে এই অবস্থায় আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে যাই। পরে উপায় না দেখে বাধ্য হয়ে উবারে আবার ঢাকা বিমানবন্দরে চলে আসি। এরপর সাড়ে ১১ হাজার টাকা দিয়ে আমি সকাল ৭টা ১০ মিনিটের একটি ফ্লাইটে সিলেটে পৌঁছাই।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রবাসী শাকিল বলেন, গ্রিন লাইনের এমন হয়রানির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ জানিয়েছি। বর্তমান সরকার যেখানে বিমানবন্দরসহ সব জায়গায় প্রবাসীদের সম্মান ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে নানারকম পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেখানে গ্রিন লাইনের মতো বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ মেনে নেওয়ার নয়। সেই রাতে আমি যেকোনো সময় ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার প্রবল আশঙ্কা নিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত পার করেছি। আমি চাই না আর কোনো প্রবাসী এ ধরনের অন্যায় আচরণের শিকার হোক।

তিনি আরও বলেন, তারা এসএমএসে বলেছে কাউন্টারে আসার সময় ইমেইলে আসা টিকিটের প্রিন্ট কপি নিয়ে আসতে হবে। আমি যদি অনলাইনে টিকিট কেটে থাকি তাহলে আমাকে আবার কেন দোকান থেকে প্রিন্ট করে তাদের দেখাতে হবে। আমার কাছে তো এসএমএস এবং ইমেইলে আসা টিকিটের কপি আছেই। এটাও তাদের দেওয়া এক ধরনের ভোগান্তি।

যাত্রী হয়রানির বিষয়ে জানতে ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে গ্রিন লাইন পরিবহন এবং ওয়াটার ওয়েজের জেনারেল ম্যানেজার আব্দুস সাত্তারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি বারবার কল কেটে দিয়েছেন। তাকে অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত হোয়াটসঅ্যাপে জানালেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

পরে গ্রিন লাইন পরিবহন এবং ওয়াটার ওয়েজের কাস্টমার কেয়ার নম্বরে কল দিয়ে বিস্তারিত জানালে সেখান থেকে ঢাকা পোস্টকে বলা হয়, আমাদের অনলাইনে টিকিট বিক্রি করে ‘পরিবহন ডটকম’। তারা জানিয়েছে ভুক্তভোগী যাত্রী যে টিকিট কেটেছিলেন, সেটি কনফার্ম। কিন্তু সেটি আমাদের এখান থেকে এক প্রতিনিধি ভুলে বা যেকোনো কারণে ক্যানসেল করেছিল। এ জন্য সমস্যা হয়েছিল।

এমন ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রিন লাইন পরিবহনের মতো নামিদামি বাস কোম্পানির কাছ থেকে এমন ঘটনা প্রত্যাশিত না। অবশ্যই তাদের শাস্তি আওতায় আনা উচিত। তারা যদি কাস্টমারদের সঙ্গে এমন আচরণ করে, তাহলে মানুষ ভরসা করবে কার ওপর।

অনলাইনে টিকিট প্রিন্ট করে নিয়ে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনলাইনের টিকিটে যেসব রেকর্ড থাকবে সেগুলোই কিন্তু ভ্যালিড। অনলাইনের ক্ষেত্রে আবার প্রিন্ট করে নিয়ে আসতে বলা এক ধরনের ভোগান্তি। একজন ভোক্তা প্রিন্টের ঝামেলায় যাবেন না বলেই তো অনলাইনে টিকিট কেটেছেন। সবকিছুর জন্যই তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। 

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খানের অফিসিয়াল মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে অভিযোগ ও তদন্ত বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, যদি কেউ প্রতারণা করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে তার প্রতিকার পাওয়ার জায়গা আছে। সরকারিভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ করা যায়। আমরা সেই অভিযোগগুলো দেখি এবং চুলচেরা বিশ্লেষণ করে আইনানুগ যে ব্যবস্থা, সেটি দেওয়া হয়। তার অভিযোগের বিষয়টি আমরা দেখব এবং সেই আলোকে সমাধান দেব।

সূত্র: ঢাকা পোস্ট

আরও পড়ুন

প্রবাসীদের ভোটের জন্য আসছে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ

প্রবাসীদের ভোটের জন্য আসছে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিবন্ধনের জন্য ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ নামের অ্যাপ তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।

১৯ ঘণ্টা আগে

ঢাকায় ভিসা আবেদন কেন্দ্র চালু করেছে ফ্রান্স

ঢাকায় ভিসা আবেদন কেন্দ্র চালু করেছে ফ্রান্স

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অত্যাধুনিক ভিসা আবেদন কেন্দ্র চালু করেছে ফ্রান্স। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ভিসা প্রার্থী বাংলাদেশি আবেদনকারীদের উন্নত সেবা প্রদানের জন্য আবেদন কেন্দ্রটি চালু করা হয়।

১ দিন আগে

প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধন শুরু হতে পারে অক্টোবরে

প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধন শুরু হতে পারে অক্টোবরে

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভোট দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রবাসী বাংলাদেশিরা যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সে জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা আছে বলে ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

১ দিন আগে

লি‌বিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন আরও ১৭৬ বাংলাদে‌শি

লি‌বিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন আরও ১৭৬ বাংলাদে‌শি

অবৈধ পথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিতে গিয়ে লিবিয়ায় ধরা পড়া ১৭৬ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন।

১ দিন আগে