ফারহানা আহমেদ লিসা, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
আমি ঝুম। বৃষ্টি পাগল মা আমার নাম রাখতে চেয়েছিলেন ঝুম বৃষ্টি। কিন্তু আমেরিকানদের জন্য নামটা কঠিন হয়ে যাবে চিন্তা করে বাবা ছোট্ট করে নাম রেখেছেন ঝুম। আমি যাচ্ছি বাংলাদেশে বেড়াতে। দেশে আমার খালামনি আর কাজিনরা থাকেন। এই সময়টাতে আমেরিকার পড়াশোনা আর পার্ট টাইম চাকরি থেকে এক মাস ছুটি নিয়েছি। আমার শিকড় বাংলাদেশে বেড়াতে যাচ্ছি। লস অ্যাঞ্জেলেস শহর থেকে যাব। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে উঠলাম পয়লা ফেব্রুয়ারির একটা রোদেলা দিনে।
১৭ ঘন্টা টানা প্লেন জার্নি। ভীষণ কষ্টকর। মুভি দেখে আর কতটুকু সময় কাটে? একটু ঘুমালাম। বাবা–মার জন্য মন কেমন কেমন করছে। প্লেনে খাবারগু তেমন সুবিধার লাগল না। কোনো রকম সিঙ্গাপুর পৌঁছালাম। ১৫ ঘন্টা পর ঢাকার প্লেন। ফ্রেস হয়ে কিছু খেয়ে অকারণে কিছুক্ষণ এয়ারপোর্টে ঘুরলাম। সময় কাটছে না। হেলথ কার্ড আগেই ফিলাপ করেছিলাম। ভাবলাম সিঙ্গাপুর শহরটা ঘুরে দেখি। ফ্রি সিটি টুরের ব্যবস্থা আছে। গেলাম বুথে। ইন্ডিয়ান একজন নারী দাঁড়ানো। আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত তিনবার দেখে বললেন একাই যাচ্ছ নাকি? সাথে কেউ নাই? বললাম না। বললেন এই লাগেজ জমা রেখে যেতে হবে নয়তো উঠতেই দেব না টুর বাসে। বললাম আপনি নাম লিখুন, লাগেজ রেখেই আসব আমি। তারপরও আবার বললেন একাই যাচ্ছ? আর কেউ নাই সাথে? মেজাজ সপ্তমে উঠল, মহিলা কি কানে কম শোনে? পাশে তাকিয়ে দেখি চশমা পরা চুলে ডাই করা এক ছেলে হাসছে। বয়স আমার মতোই হবে। এর কি সমস্যা?
ট্রলি ব্যাগটা স্টোরেজে রাখলাম। চাইনিজ নিউ ইয়ারের জন্য এয়ারপোর্টটা বেশ সাজিয়েছে ওরা। এয়ারপোর্টের ভেতরে সাজানো বাগান, সেলফি তুলতে তুলতে পাশ ফিরে দেখি ওই ছেলে। ইংরেজিতে বলল, ছবি তুলে দিব? বাংলায় বললাম, না, মি ঝামেলা। তারপর ইংরেজিতে বললাম নো থ্যাংকস। ছেলেটা চশমাটা খুলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে এমন হো হো হাসি শুরু করল। বললাম, হোয়াটস রং? ও বলল, আমি বাংলাদেশি তো, নাম কাব্য। ঝামেলা না। আমার এবার অবাক হবার পালা।
যাক বলেই বসলাম, ফ্রি টুরের মহিলার কান্ড দেখেছ? আমি তো জানি সিঙ্গাপুরে ১০০ পার্সেন্ট মানুষ শিক্ষিত। কেন এতবার জানতে চাইল আমি একা কি না। ও হাসল, বলল, মহিলা পাগল। বাদ দাও তো। আমি কতবার এসেছি ওরা এমন না। টুরের ২ ঘন্টা আগে গেলাম খোঁজ নিতে, দেখি শেষ টুরে আমার নাম ওয়েট লিস্টে। অন্য এক নারী বসা কাউন্টারে। সে বলল, তোমার কিউ আর কোড কই? আমি তর্ক করলাম আগের মহিলা বলেছে তোমাদের সিট আছে এবং আমার নাম লিখেছে। এরপর একটা গলা ভেসে এল পাশ থেকে, আমার নাম কেটে ঝুমকে যেতে দাও প্লিজ। তাকিয়ে দেখি কাব্য। আমি কিছু বলার আগে মহিলা হাসলেন। কী একটা চেক করে বললেন একটা সিট খালি আছে, দিয়ে দিচ্ছি। তোমার সিট লাগবে না।
ইমিগ্রেশন পার হলাম আমরা একসাথে। টুর গাইডের সাথে ২০ জন একটা বাসে উঠলাম। কাব্য জানালার পাশে আমাকে বসতে দিয়ে পাশে বসল। বললাম তুমি কোথায় যাচ্ছ? ও বলল ঢাকা, বইমেলায় যাব, মায়ের জন্য বই কিনব। তুমি? বললাম, খালামনির কাছে যাব আর আড়ংয়ে যাব।
বাস চলতে শুরু করল। টুর গাইড জানালেন রিক্লেইম ল্যান্ড মানে সাগরের জমি ভরাট করে সিঙ্গাপুর শহর তৈরি করা হয়েছে। শহরে বাড়ির দাম তাই এত বেশি। দেখালেন কোথায় নিম্নমধ্যবিত্ত আর উচ্চ মধ্যবিত্তরা থাকেন। উচ্চ বিত্তদের বাসাও দেখালেন। তারপর আমরা গেলাম গার্ডেন বাই দ্য বে তে। সময় ৪০ মিনিট। একটা বার টুর নিলাম আমরা। ওদের বাগানগুলো অপূর্ব। সুপার ট্রি দেখলাম। কাব্য ছবি তুলে দিল অনেক আমাকে। বলল, মন ভরে দেখ, ছবিতে এত সুন্দর আসবে না।
এরপর আমরা গেলাম বেতে, দেখব বিখ্যাত মারলায়ন, সিংহের মাথা আর মাছের শরীর নিয়ে সিঙ্গাপুরের সিগনেচার ম্যাসকট। সিঙ্গাপুরের নাম অনেকবার পরিবর্তিত হয়েছে। মালয় আর চাইনিজদের সংমিশ্রণে হয়েছে আজকের আধুনিক সিঙ্গাপুর। আমরা নামলাম। খুব ইচ্ছে করছিল বোট টুর নিব, কিন্ত কাব্য বলল, সময় হবে না ঝুম। বললাম তাহলে মারলায়নের কাছে চল যাই, ছবি তুলে দিবে। ও বলল, যখন তখন বৃষ্টি হয় এ দেশে, এক্সট্রা কাপড় আছে? বললাম, না। ও বলল, আস ওদের মজার ড্রিংকস খাওয়াই। ডাবের পানির সাথে শাঁস ব্লেন্ড করা মজার একটা ড্রিংকস। খেতে খেতে আবার বললাম, চল, মারলায়নের কাছে ছবি তুলব।
ও আর আমি হাঁটছি ব্রিজের ওপর। মনেই হচ্ছে না আগে কোনোদিন কাব্যের সাথে আমার পরিচয় ছিল না। মারলায়নের কাছাকাছি পৌঁছাতে নামল ঝুম বৃষ্টি। কোনোরকম ছবি তুলে দিলাম দৌড়। একটু পরে বাসে ফিরে চললাম এয়ারপোর্টের পথে। কাব্য বলল, ও নিউইয়র্ক থাকে, পড়ছে পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে। আমি পড়ছি সাইকোলজি।
নেমে ছুটলাম আমার ব্যাগ নিতে। এরপর প্লেনে উঠলাম আমরা। কাব্যর সিট পিছনে। সাড়ে ৩ ঘন্টায্ আর দেখা হলো না। ঢাকা এয়ারপোর্টে নেমে ব্যস্ত হয়ে গেলাম ইমিগ্রেশন পার হয়ে লাগেজ কালেক্ট করতে। খালামনি এসে দাঁড়িয়ে আছেন। বের হবার আগে একবার কাব্যকে দেখলাম। হাত নেড়ে বাই বলে দিলাম।
রাতের ঢাকা কী অসম্ভব সুন্দর। খালামনি কত কত আদুরে গল্প করছে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে কাব্য সাথে গেলে খুব ভালো হোত। কেন? এতদিন কখনো কারও জন্য এরকম লাগেনি। বাসায় পৌঁছে পরদিন রেস্ট নিলাম। তার পরদিন লাঞ্চ করতে গেলাম পাগলা বাবুর্চি রেস্টুরেন্টে। খালামনিকে বললাম বইমেলা যাব। খালামনি বললেন, তুইতো বাংলাই ভালো করে পড়তে পারিস না, বইমেলা কেন? খামোখা ধুলা খাবি। রকমারিতে অর্ডার দিয়ে দেব। আমার খুব ইচ্ছে করছে কাব্যকে দেখতে। সে বলেছিল বইমেলা যাবে। যদি আর একবার দেখতে পেতাম ওকে।
তার পরদিন গেলাম আড়ং। গান বাজছে—
‘বাতাসে বহিছে প্রেম
নয়নে লাগিল নেশা
কারা যে ডাকিল পিছে
বসন্ত এসে গেছে।…..’
ইস কেন যে কাব্যর কোনো কন্টাক্ট ইনফো নিলাম না। এমন সময় কে যেন এসে ডাকল ঝুম, কেমন আছ? কাব্য? কাব্যই তো। বললাম আরে কোনো ইনফো না দিয়ে কোথায্ হাওয়া হয়ে গেলে? ও হাসল, খালামনিকে সালাম দিল। তারপর বলল, কাফেতে বসি চল। খালামনিও গেল সাথে। আমি ওকে অনেক কিছু বলতে চাই। কিচ্ছু বললাম না। ও বলল, ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম আইডি দাও। দিলাম। বন্ধু হলাম। খালামনি ওর বাবা–মা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে চাইলেন। আমি চুপ। দেখছি ও আমার পচ্ছন্দের ফুচকা, সুশি আর কফি অর্ডার করল (এতকিছু মনে রেখেছে?)। আমি চিনি দিতে গিয়ে টেবিলে ছড়ালাম। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি কিন্তু জানতে দিতে চাইলাম না। ও হয়তো বন্ধু ভাবছে। আবার হো হো করে যদি হাসে আমার কথা শুনে। কিন্তু আমার বলতে ইচ্ছে করছে জীবনের প্রথম প্রেম, তোমাকে জানতে চাই। টাকা দিতে গেলাম, কাব্য দিয়ে দিল। বলল. ওর কাছ থেকে টাকা নেবেন না। সব নকল টাকা। খালামনি বিরক্ত। বললেন. আজকালকার ছেলেগুলো এত কথা বলে।
বাসায় চলে এলাম। কাব্যর সাথে টুকটাক চ্যাট ছাড়া আর তেমন কোনো কথা হয়নি। আমরা এর মাঝে হাতিরঝিল গেলাম, ময়নামতি গেলাম, ইলিশ খেলাম। এরপর যাওয়ার দিন চলে এল। কালকে ভ্যালেন্টাইনস ডে। মানে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। আমার খুব ইচ্ছে করছে কাব্যকে জিজ্ঞেস করি উইল ইউ বি মাই ভ্যালেন্টাইন?
এর মাঝে খালামনির গার্ড এসে বিশাল একটা প্যাকেট গিল। আমার নামে এসেছে, ভেতরে গোলাপ, চকলেট আর বেয়ার। ছোট্ট করে লেখা—
‘লাভ ইজ ইন দ্য এয়ার ঝুম
ক্যন ইউ ফিল ইট?
ফরএভার ইয়োরস
কাব্য’
এই প্রথম খালামনির কঠিন চোখ উপেক্ষা করে হাসলাম। তারপর আইডিতে গিয়ে লিখলাম—
‘ইয়েস আই ক্যান ফিল ইট K’
আমি ঝুম। বৃষ্টি পাগল মা আমার নাম রাখতে চেয়েছিলেন ঝুম বৃষ্টি। কিন্তু আমেরিকানদের জন্য নামটা কঠিন হয়ে যাবে চিন্তা করে বাবা ছোট্ট করে নাম রেখেছেন ঝুম। আমি যাচ্ছি বাংলাদেশে বেড়াতে। দেশে আমার খালামনি আর কাজিনরা থাকেন। এই সময়টাতে আমেরিকার পড়াশোনা আর পার্ট টাইম চাকরি থেকে এক মাস ছুটি নিয়েছি। আমার শিকড় বাংলাদেশে বেড়াতে যাচ্ছি। লস অ্যাঞ্জেলেস শহর থেকে যাব। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে উঠলাম পয়লা ফেব্রুয়ারির একটা রোদেলা দিনে।
১৭ ঘন্টা টানা প্লেন জার্নি। ভীষণ কষ্টকর। মুভি দেখে আর কতটুকু সময় কাটে? একটু ঘুমালাম। বাবা–মার জন্য মন কেমন কেমন করছে। প্লেনে খাবারগু তেমন সুবিধার লাগল না। কোনো রকম সিঙ্গাপুর পৌঁছালাম। ১৫ ঘন্টা পর ঢাকার প্লেন। ফ্রেস হয়ে কিছু খেয়ে অকারণে কিছুক্ষণ এয়ারপোর্টে ঘুরলাম। সময় কাটছে না। হেলথ কার্ড আগেই ফিলাপ করেছিলাম। ভাবলাম সিঙ্গাপুর শহরটা ঘুরে দেখি। ফ্রি সিটি টুরের ব্যবস্থা আছে। গেলাম বুথে। ইন্ডিয়ান একজন নারী দাঁড়ানো। আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত তিনবার দেখে বললেন একাই যাচ্ছ নাকি? সাথে কেউ নাই? বললাম না। বললেন এই লাগেজ জমা রেখে যেতে হবে নয়তো উঠতেই দেব না টুর বাসে। বললাম আপনি নাম লিখুন, লাগেজ রেখেই আসব আমি। তারপরও আবার বললেন একাই যাচ্ছ? আর কেউ নাই সাথে? মেজাজ সপ্তমে উঠল, মহিলা কি কানে কম শোনে? পাশে তাকিয়ে দেখি চশমা পরা চুলে ডাই করা এক ছেলে হাসছে। বয়স আমার মতোই হবে। এর কি সমস্যা?
ট্রলি ব্যাগটা স্টোরেজে রাখলাম। চাইনিজ নিউ ইয়ারের জন্য এয়ারপোর্টটা বেশ সাজিয়েছে ওরা। এয়ারপোর্টের ভেতরে সাজানো বাগান, সেলফি তুলতে তুলতে পাশ ফিরে দেখি ওই ছেলে। ইংরেজিতে বলল, ছবি তুলে দিব? বাংলায় বললাম, না, মি ঝামেলা। তারপর ইংরেজিতে বললাম নো থ্যাংকস। ছেলেটা চশমাটা খুলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে এমন হো হো হাসি শুরু করল। বললাম, হোয়াটস রং? ও বলল, আমি বাংলাদেশি তো, নাম কাব্য। ঝামেলা না। আমার এবার অবাক হবার পালা।
যাক বলেই বসলাম, ফ্রি টুরের মহিলার কান্ড দেখেছ? আমি তো জানি সিঙ্গাপুরে ১০০ পার্সেন্ট মানুষ শিক্ষিত। কেন এতবার জানতে চাইল আমি একা কি না। ও হাসল, বলল, মহিলা পাগল। বাদ দাও তো। আমি কতবার এসেছি ওরা এমন না। টুরের ২ ঘন্টা আগে গেলাম খোঁজ নিতে, দেখি শেষ টুরে আমার নাম ওয়েট লিস্টে। অন্য এক নারী বসা কাউন্টারে। সে বলল, তোমার কিউ আর কোড কই? আমি তর্ক করলাম আগের মহিলা বলেছে তোমাদের সিট আছে এবং আমার নাম লিখেছে। এরপর একটা গলা ভেসে এল পাশ থেকে, আমার নাম কেটে ঝুমকে যেতে দাও প্লিজ। তাকিয়ে দেখি কাব্য। আমি কিছু বলার আগে মহিলা হাসলেন। কী একটা চেক করে বললেন একটা সিট খালি আছে, দিয়ে দিচ্ছি। তোমার সিট লাগবে না।
ইমিগ্রেশন পার হলাম আমরা একসাথে। টুর গাইডের সাথে ২০ জন একটা বাসে উঠলাম। কাব্য জানালার পাশে আমাকে বসতে দিয়ে পাশে বসল। বললাম তুমি কোথায় যাচ্ছ? ও বলল ঢাকা, বইমেলায় যাব, মায়ের জন্য বই কিনব। তুমি? বললাম, খালামনির কাছে যাব আর আড়ংয়ে যাব।
বাস চলতে শুরু করল। টুর গাইড জানালেন রিক্লেইম ল্যান্ড মানে সাগরের জমি ভরাট করে সিঙ্গাপুর শহর তৈরি করা হয়েছে। শহরে বাড়ির দাম তাই এত বেশি। দেখালেন কোথায় নিম্নমধ্যবিত্ত আর উচ্চ মধ্যবিত্তরা থাকেন। উচ্চ বিত্তদের বাসাও দেখালেন। তারপর আমরা গেলাম গার্ডেন বাই দ্য বে তে। সময় ৪০ মিনিট। একটা বার টুর নিলাম আমরা। ওদের বাগানগুলো অপূর্ব। সুপার ট্রি দেখলাম। কাব্য ছবি তুলে দিল অনেক আমাকে। বলল, মন ভরে দেখ, ছবিতে এত সুন্দর আসবে না।
এরপর আমরা গেলাম বেতে, দেখব বিখ্যাত মারলায়ন, সিংহের মাথা আর মাছের শরীর নিয়ে সিঙ্গাপুরের সিগনেচার ম্যাসকট। সিঙ্গাপুরের নাম অনেকবার পরিবর্তিত হয়েছে। মালয় আর চাইনিজদের সংমিশ্রণে হয়েছে আজকের আধুনিক সিঙ্গাপুর। আমরা নামলাম। খুব ইচ্ছে করছিল বোট টুর নিব, কিন্ত কাব্য বলল, সময় হবে না ঝুম। বললাম তাহলে মারলায়নের কাছে চল যাই, ছবি তুলে দিবে। ও বলল, যখন তখন বৃষ্টি হয় এ দেশে, এক্সট্রা কাপড় আছে? বললাম, না। ও বলল, আস ওদের মজার ড্রিংকস খাওয়াই। ডাবের পানির সাথে শাঁস ব্লেন্ড করা মজার একটা ড্রিংকস। খেতে খেতে আবার বললাম, চল, মারলায়নের কাছে ছবি তুলব।
ও আর আমি হাঁটছি ব্রিজের ওপর। মনেই হচ্ছে না আগে কোনোদিন কাব্যের সাথে আমার পরিচয় ছিল না। মারলায়নের কাছাকাছি পৌঁছাতে নামল ঝুম বৃষ্টি। কোনোরকম ছবি তুলে দিলাম দৌড়। একটু পরে বাসে ফিরে চললাম এয়ারপোর্টের পথে। কাব্য বলল, ও নিউইয়র্ক থাকে, পড়ছে পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে। আমি পড়ছি সাইকোলজি।
নেমে ছুটলাম আমার ব্যাগ নিতে। এরপর প্লেনে উঠলাম আমরা। কাব্যর সিট পিছনে। সাড়ে ৩ ঘন্টায্ আর দেখা হলো না। ঢাকা এয়ারপোর্টে নেমে ব্যস্ত হয়ে গেলাম ইমিগ্রেশন পার হয়ে লাগেজ কালেক্ট করতে। খালামনি এসে দাঁড়িয়ে আছেন। বের হবার আগে একবার কাব্যকে দেখলাম। হাত নেড়ে বাই বলে দিলাম।
রাতের ঢাকা কী অসম্ভব সুন্দর। খালামনি কত কত আদুরে গল্প করছে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে কাব্য সাথে গেলে খুব ভালো হোত। কেন? এতদিন কখনো কারও জন্য এরকম লাগেনি। বাসায় পৌঁছে পরদিন রেস্ট নিলাম। তার পরদিন লাঞ্চ করতে গেলাম পাগলা বাবুর্চি রেস্টুরেন্টে। খালামনিকে বললাম বইমেলা যাব। খালামনি বললেন, তুইতো বাংলাই ভালো করে পড়তে পারিস না, বইমেলা কেন? খামোখা ধুলা খাবি। রকমারিতে অর্ডার দিয়ে দেব। আমার খুব ইচ্ছে করছে কাব্যকে দেখতে। সে বলেছিল বইমেলা যাবে। যদি আর একবার দেখতে পেতাম ওকে।
তার পরদিন গেলাম আড়ং। গান বাজছে—
‘বাতাসে বহিছে প্রেম
নয়নে লাগিল নেশা
কারা যে ডাকিল পিছে
বসন্ত এসে গেছে।…..’
ইস কেন যে কাব্যর কোনো কন্টাক্ট ইনফো নিলাম না। এমন সময় কে যেন এসে ডাকল ঝুম, কেমন আছ? কাব্য? কাব্যই তো। বললাম আরে কোনো ইনফো না দিয়ে কোথায্ হাওয়া হয়ে গেলে? ও হাসল, খালামনিকে সালাম দিল। তারপর বলল, কাফেতে বসি চল। খালামনিও গেল সাথে। আমি ওকে অনেক কিছু বলতে চাই। কিচ্ছু বললাম না। ও বলল, ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম আইডি দাও। দিলাম। বন্ধু হলাম। খালামনি ওর বাবা–মা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে চাইলেন। আমি চুপ। দেখছি ও আমার পচ্ছন্দের ফুচকা, সুশি আর কফি অর্ডার করল (এতকিছু মনে রেখেছে?)। আমি চিনি দিতে গিয়ে টেবিলে ছড়ালাম। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি কিন্তু জানতে দিতে চাইলাম না। ও হয়তো বন্ধু ভাবছে। আবার হো হো করে যদি হাসে আমার কথা শুনে। কিন্তু আমার বলতে ইচ্ছে করছে জীবনের প্রথম প্রেম, তোমাকে জানতে চাই। টাকা দিতে গেলাম, কাব্য দিয়ে দিল। বলল. ওর কাছ থেকে টাকা নেবেন না। সব নকল টাকা। খালামনি বিরক্ত। বললেন. আজকালকার ছেলেগুলো এত কথা বলে।
বাসায় চলে এলাম। কাব্যর সাথে টুকটাক চ্যাট ছাড়া আর তেমন কোনো কথা হয়নি। আমরা এর মাঝে হাতিরঝিল গেলাম, ময়নামতি গেলাম, ইলিশ খেলাম। এরপর যাওয়ার দিন চলে এল। কালকে ভ্যালেন্টাইনস ডে। মানে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। আমার খুব ইচ্ছে করছে কাব্যকে জিজ্ঞেস করি উইল ইউ বি মাই ভ্যালেন্টাইন?
এর মাঝে খালামনির গার্ড এসে বিশাল একটা প্যাকেট গিল। আমার নামে এসেছে, ভেতরে গোলাপ, চকলেট আর বেয়ার। ছোট্ট করে লেখা—
‘লাভ ইজ ইন দ্য এয়ার ঝুম
ক্যন ইউ ফিল ইট?
ফরএভার ইয়োরস
কাব্য’
এই প্রথম খালামনির কঠিন চোখ উপেক্ষা করে হাসলাম। তারপর আইডিতে গিয়ে লিখলাম—
‘ইয়েস আই ক্যান ফিল ইট K’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিবন্ধনের জন্য ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ নামের অ্যাপ তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অত্যাধুনিক ভিসা আবেদন কেন্দ্র চালু করেছে ফ্রান্স। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ভিসা প্রার্থী বাংলাদেশি আবেদনকারীদের উন্নত সেবা প্রদানের জন্য আবেদন কেন্দ্রটি চালু করা হয়।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভোট দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রবাসী বাংলাদেশিরা যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সে জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা আছে বলে ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অবৈধ পথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিতে গিয়ে লিবিয়ায় ধরা পড়া ১৭৬ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন।