শাহাবুদ্দিন শুভ
মানবসভ্যতার ইতিহাসে এমন পরিবার খুব কমই আছে, যাদের অবদান বিজ্ঞানের জগতে এত গভীর রেখাপাত করেছে, আবার একইসাথে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, বিশেষ করে নোবেল পুরস্কার তাদের কাছে একের পর এক ধরা দিয়েছে। মাদাম কুরি ও তার পরিবার সেই বিরল দৃষ্টান্ত। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের প্যানথিয়ন স্মৃতিসৌধে সমাহিত আছেন মেরি কুরি (মারিয়া স্কলোদোভস্কা-কুরি) এবং তার স্বামী পিয়ের কুরি। তাদের সমাধি কেবল ইতিহাসের একটি অধ্যায় নয়, বরং মানবজাতির অগ্রযাত্রার চিরন্তন প্রতীক।
ছোটবেলা থেকেই আমার নোবেল বিজয়ীদের প্রতি এক ধরনের টান ছিল। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় হবিগঞ্জ থেকে প্রকাশিত কিছু পত্রিকার মাসিক কুইজ প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশ নিতাম। সেই প্রতিযোগিতার প্রশ্নপত্রে নোবেল পুরস্কারজয়ী বিজ্ঞানী বা সাহিত্যিকদের নিয়ে প্রশ্ন থাকাটা ছিল খুবই সাধারণ বিষয়। তাই সাধারণ জ্ঞান বই থেকে নোবেল বিজয়ীদের নাম, তাদের অবদান মুখস্থ করতে হতো। বিশেষ করে যখন জানতে পারলাম, এক পরিবারের তিনজন সদস্যই নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তখন বিষয়টি মনে গেঁথে যায়। বইপত্রে সবসময় বড় হরফে লেখা থাকত—‘কুরি পরিবার: এক পরিবারের তিন নোবেল’। সেই কৌতূহল থেকেই মনে মনে ভাবতাম, যদি একদিন তাদের দেশ বা সমাধি দর্শন করতে পারতাম! ফ্রান্সে আসার পর সেই স্বপ্নও পূর্ণ হলো। প্যানথিয়নের ভেতরে কুরি দম্পতির সমাধির সামনে দাঁড়িয়ে এক অদ্ভুত আবেগ আমাকে আচ্ছন্ন করেছিল। মনে হচ্ছিল, আমি যেন ইতিহাসের এক জীবন্ত অধ্যায়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি।
পরিবার থেকে কারা সমাহিত?
প্যানথিয়নে সমাহিত আছেন—
মারি কুরি (১৮৬৭-১৯৩৪)—বিশ্বের প্রথম নারী নোবেলজয়ী এবং একমাত্র ব্যক্তি যিনি দুটি ভিন্ন শাস্ত্রে (পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন) নোবেল পেয়েছেন।
পিয়ের কুরি (১৮৫৯-১৯০৬)—বিশিষ্ট ফরাসি পদার্থবিদ, যিনি স্ত্রীর সঙ্গে মিলে রেডিয়েশন নিয়ে যুগান্তকারী গবেষণা করেছিলেন।
তাদের কন্যা ইরিন জোলিও-কুরিও (Irène Joliot-Curie) নোবেলজয়ী হলেও তাকে এখানে সমাহিত করা হয়নি। ইরিন ও তার স্বামী ফ্রেদেরিক জোলিও-কুরি অন্য সমাধিক্ষেত্রে শায়িত আছেন। তবুও কুরি পরিবারের নাম প্যানথিয়নের ইতিহাসে আলাদা মর্যাদায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। বিশেষ করে মারি কুরি এখানে প্রথম নারী হিসেবে কেবল নিজের যোগ্যতায় সমাহিত হন, যা ফরাসি জাতি ও বিশ্বের নারীদের জন্য এক অনন্য গৌরব। তাদের সমাধি দর্শনে বোঝা যায়, ইতিহাস কোনো বইয়ের পাতায় বন্দি নয়—তা বাস্তবেও আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।
পরিবারের নোবেল জয়
কুরি পরিবারের নোবেল ইতিহাস সত্যিই বিস্ময়কর।
মারি কুরি: ১৯০৩ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার (স্বামী পিয়ের কুরি ও হেনরি বেকেরেলের সাথে ভাগাভাগি করে)।
১৯১১ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার, রেডিয়াম ও পোলোনিয়াম আবিষ্কারের জন্য।
পিয়ের কুরি: ১৯০৩ সালের পদার্থবিদ্যা নোবেল, স্ত্রীর সাথে যৌথভাবে।
ইরিন জোলিও-কুরি (তাদের জ্যেষ্ঠ কন্যা): ১৯৩৫ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার, স্বামী ফ্রেদেরিক জোলিও-কুরির সাথে, কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তার (artificial radioactivity) আবিষ্কারের জন্য।
অর্থাৎ, কুরি পরিবারের তিনজন (মারি, পিয়ের, ইরিন) নোবেলজয়ী। আর যদি ইরিনের স্বামী ফ্রেদেরিককেও গণনা করি, তবে এই পরিবারে চারজনের হাতে নোবেল গেছে। এক পরিবারের এত নোবেল জয় ইতিহাসে আর কোথাও দেখা যায়নি।
বৈজ্ঞানিক অবদান
মারি ও পিয়ের কুরির কাজ আধুনিক বিজ্ঞানের ধারা পাল্টে দিয়েছে। রেডিয়াম ও পোলোনিয়ামের আবিষ্কার শুধু পরমাণু-গবেষণার নতুন দিগন্তই উন্মুক্ত করেনি, বরং চিকিৎসাশাস্ত্রে (বিশেষ করে ক্যানসার চিকিৎসার রেডিয়েশন থেরাপি) বিপ্লব ঘটিয়েছে।
পিয়ের কুরির পদার্থবিদ্যায় অবদান
পিয়ের কুরির পদার্থবিদ্যায় অবদান ছিল অনন্য। ক্রিস্টালোগ্রাফি, চৌম্বকত্ব এবং পাইজোইলেকট্রিসিটি নিয়ে তাঁর গবেষণা পরবর্তী শিল্প ও প্রযুক্তির ভিত্তি তৈরি করেছিল। অন্যদিকে, মারি কুরি ল্যাবরেটরির বাইরে যুদ্ধকালেও অবদান রাখেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি মোবাইল এক্স-রে ইউনিট স্থাপন করেন, যা যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈন্যদের চিকিৎসায় বিপ্লব ঘটায়।
তাদের কন্যা ইরিন ও জামাতা ফ্রেদেরিক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিলেন কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা (artificial radioactivity) আবিষ্কারের মাধ্যমে। এ আবিষ্কার পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার, চিকিৎসা ও কৃষি গবেষণার জন্য অভাবনীয় সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়।
ব্যক্তিগত জীবন
মারি কুরি ছিলেন পোল্যান্ডে জন্ম নেওয়া এক নারী, যিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ফ্রান্সে আসেন। অর্থনৈতিক সংকট, নারী হওয়ার কারণে বৈষম্য, বৈজ্ঞানিক সমাজের সন্দেহ—সবকিছু পেরিয়ে তিনি নিজের মেধা ও অধ্যবসায় দিয়ে ইতিহাসে স্থান করে নেন।
পিয়ের কুরি ছিলেন শান্ত ও সহৃদয় গবেষক, যিনি স্ত্রীর প্রতিভাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাদের সম্পর্ক কেবল দাম্পত্য জীবনে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার অনন্য উদাহরণ। ১৯০৬ সালে দুর্ঘটনায় পিয়ের মারা গেলে মারি ভেঙে পড়লেও গবেষণা ছাড়েননি। বরং তিনি আরও দৃঢ় সংকল্পে ল্যাবরেটরিতে ফিরে আসেন।
তাদের দুই কন্যাও মায়ের পথ অনুসরণ করেছিলেন। ইরিন বিজ্ঞানি হয়ে নোবেল পান, আর ইভ কুরি সাহিত্য ও সমাজসেবায় খ্যাতি অর্জন করেন। ইভের লেখা Madame Curie বইটি আজও জীবনী সাহিত্যে ক্লাসিক হিসেবে গণ্য হয়। এভাবেই কুরি পরিবার শুধু বিজ্ঞানে নয়, সংস্কৃতি ও মানবিকতায়ও নিজেদের উত্তরাধিকার সমৃদ্ধ করেছে।
কুরি পরিবারের উত্তরাধিকার
আজও কুরি পরিবারের অবদান আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যমান। ক্যানসার চিকিৎসার রেডিয়েশন থেরাপি, পারমাণবিক শক্তির গবেষণা কিংবা মৌলিক পদার্থবিদ্যা—সবখানেই তাদের কাজের ছাপ রয়েছে। শুধু বিজ্ঞান নয়, তাদের জীবন আমাদের শেখায় অধ্যবসায়, ত্যাগ আর জ্ঞানের জন্য সংগ্রাম কেমন করে মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
প্যানথিয়নে সমাহিত হওয়া মানে ফরাসি জাতির শ্রেষ্ঠদের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া। মাদাম কুরি সেখানে একমাত্র নারী যিনি কেবল নিজের যোগ্যতায় সেই মর্যাদা অর্জন করেছেন। তার পাশে শায়িত আছেন জীবনসঙ্গী ও গবেষণার সহযাত্রী পিয়ের কুরি। তাদের সমাধি নিছক দুটি কফিন নয়, বরং একটি জাতি এবং সমগ্র বিশ্বের কৃতজ্ঞতার প্রতীক।
বিজ্ঞান কেবল গবেষণাগারের চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ থাকে না; তা মানুষের জীবন বদলে দেয়, সমাজকে এগিয়ে নেয়। মাদাম কুরি ও তার পরিবার এর উজ্জ্বল উদাহরণ। এক পরিবারের হাতে তিনটি নোবেল পুরস্কার ওঠা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়, বরং জ্ঞানের জন্য নিরলস সাধনার প্রতিফলন।
আজ যখন আমি প্যারিসের প্যানথিয়নে তাদের সমাধির সামনে দাঁড়িয়ে থাকি, তখন কেবল ইতিহাস নয়—মানবতার অগ্রযাত্রার এক শক্তিশালী প্রতীককে সামনে দেখি। মনে হয়, যত অন্ধকারই হোক, জ্ঞানের আলো শেষ পর্যন্ত মানবসভ্যতার পথ আলোকিত করবেই।
*লেখক : প্রধান সম্পাদক, সিলেটপিডিয়া। ইমেইল: <[email protected]>
মানবসভ্যতার ইতিহাসে এমন পরিবার খুব কমই আছে, যাদের অবদান বিজ্ঞানের জগতে এত গভীর রেখাপাত করেছে, আবার একইসাথে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, বিশেষ করে নোবেল পুরস্কার তাদের কাছে একের পর এক ধরা দিয়েছে। মাদাম কুরি ও তার পরিবার সেই বিরল দৃষ্টান্ত। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের প্যানথিয়ন স্মৃতিসৌধে সমাহিত আছেন মেরি কুরি (মারিয়া স্কলোদোভস্কা-কুরি) এবং তার স্বামী পিয়ের কুরি। তাদের সমাধি কেবল ইতিহাসের একটি অধ্যায় নয়, বরং মানবজাতির অগ্রযাত্রার চিরন্তন প্রতীক।
ছোটবেলা থেকেই আমার নোবেল বিজয়ীদের প্রতি এক ধরনের টান ছিল। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় হবিগঞ্জ থেকে প্রকাশিত কিছু পত্রিকার মাসিক কুইজ প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশ নিতাম। সেই প্রতিযোগিতার প্রশ্নপত্রে নোবেল পুরস্কারজয়ী বিজ্ঞানী বা সাহিত্যিকদের নিয়ে প্রশ্ন থাকাটা ছিল খুবই সাধারণ বিষয়। তাই সাধারণ জ্ঞান বই থেকে নোবেল বিজয়ীদের নাম, তাদের অবদান মুখস্থ করতে হতো। বিশেষ করে যখন জানতে পারলাম, এক পরিবারের তিনজন সদস্যই নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তখন বিষয়টি মনে গেঁথে যায়। বইপত্রে সবসময় বড় হরফে লেখা থাকত—‘কুরি পরিবার: এক পরিবারের তিন নোবেল’। সেই কৌতূহল থেকেই মনে মনে ভাবতাম, যদি একদিন তাদের দেশ বা সমাধি দর্শন করতে পারতাম! ফ্রান্সে আসার পর সেই স্বপ্নও পূর্ণ হলো। প্যানথিয়নের ভেতরে কুরি দম্পতির সমাধির সামনে দাঁড়িয়ে এক অদ্ভুত আবেগ আমাকে আচ্ছন্ন করেছিল। মনে হচ্ছিল, আমি যেন ইতিহাসের এক জীবন্ত অধ্যায়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি।
পরিবার থেকে কারা সমাহিত?
প্যানথিয়নে সমাহিত আছেন—
মারি কুরি (১৮৬৭-১৯৩৪)—বিশ্বের প্রথম নারী নোবেলজয়ী এবং একমাত্র ব্যক্তি যিনি দুটি ভিন্ন শাস্ত্রে (পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন) নোবেল পেয়েছেন।
পিয়ের কুরি (১৮৫৯-১৯০৬)—বিশিষ্ট ফরাসি পদার্থবিদ, যিনি স্ত্রীর সঙ্গে মিলে রেডিয়েশন নিয়ে যুগান্তকারী গবেষণা করেছিলেন।
তাদের কন্যা ইরিন জোলিও-কুরিও (Irène Joliot-Curie) নোবেলজয়ী হলেও তাকে এখানে সমাহিত করা হয়নি। ইরিন ও তার স্বামী ফ্রেদেরিক জোলিও-কুরি অন্য সমাধিক্ষেত্রে শায়িত আছেন। তবুও কুরি পরিবারের নাম প্যানথিয়নের ইতিহাসে আলাদা মর্যাদায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। বিশেষ করে মারি কুরি এখানে প্রথম নারী হিসেবে কেবল নিজের যোগ্যতায় সমাহিত হন, যা ফরাসি জাতি ও বিশ্বের নারীদের জন্য এক অনন্য গৌরব। তাদের সমাধি দর্শনে বোঝা যায়, ইতিহাস কোনো বইয়ের পাতায় বন্দি নয়—তা বাস্তবেও আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।
পরিবারের নোবেল জয়
কুরি পরিবারের নোবেল ইতিহাস সত্যিই বিস্ময়কর।
মারি কুরি: ১৯০৩ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার (স্বামী পিয়ের কুরি ও হেনরি বেকেরেলের সাথে ভাগাভাগি করে)।
১৯১১ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার, রেডিয়াম ও পোলোনিয়াম আবিষ্কারের জন্য।
পিয়ের কুরি: ১৯০৩ সালের পদার্থবিদ্যা নোবেল, স্ত্রীর সাথে যৌথভাবে।
ইরিন জোলিও-কুরি (তাদের জ্যেষ্ঠ কন্যা): ১৯৩৫ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার, স্বামী ফ্রেদেরিক জোলিও-কুরির সাথে, কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তার (artificial radioactivity) আবিষ্কারের জন্য।
অর্থাৎ, কুরি পরিবারের তিনজন (মারি, পিয়ের, ইরিন) নোবেলজয়ী। আর যদি ইরিনের স্বামী ফ্রেদেরিককেও গণনা করি, তবে এই পরিবারে চারজনের হাতে নোবেল গেছে। এক পরিবারের এত নোবেল জয় ইতিহাসে আর কোথাও দেখা যায়নি।
বৈজ্ঞানিক অবদান
মারি ও পিয়ের কুরির কাজ আধুনিক বিজ্ঞানের ধারা পাল্টে দিয়েছে। রেডিয়াম ও পোলোনিয়ামের আবিষ্কার শুধু পরমাণু-গবেষণার নতুন দিগন্তই উন্মুক্ত করেনি, বরং চিকিৎসাশাস্ত্রে (বিশেষ করে ক্যানসার চিকিৎসার রেডিয়েশন থেরাপি) বিপ্লব ঘটিয়েছে।
পিয়ের কুরির পদার্থবিদ্যায় অবদান
পিয়ের কুরির পদার্থবিদ্যায় অবদান ছিল অনন্য। ক্রিস্টালোগ্রাফি, চৌম্বকত্ব এবং পাইজোইলেকট্রিসিটি নিয়ে তাঁর গবেষণা পরবর্তী শিল্প ও প্রযুক্তির ভিত্তি তৈরি করেছিল। অন্যদিকে, মারি কুরি ল্যাবরেটরির বাইরে যুদ্ধকালেও অবদান রাখেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি মোবাইল এক্স-রে ইউনিট স্থাপন করেন, যা যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈন্যদের চিকিৎসায় বিপ্লব ঘটায়।
তাদের কন্যা ইরিন ও জামাতা ফ্রেদেরিক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিলেন কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা (artificial radioactivity) আবিষ্কারের মাধ্যমে। এ আবিষ্কার পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার, চিকিৎসা ও কৃষি গবেষণার জন্য অভাবনীয় সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়।
ব্যক্তিগত জীবন
মারি কুরি ছিলেন পোল্যান্ডে জন্ম নেওয়া এক নারী, যিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ফ্রান্সে আসেন। অর্থনৈতিক সংকট, নারী হওয়ার কারণে বৈষম্য, বৈজ্ঞানিক সমাজের সন্দেহ—সবকিছু পেরিয়ে তিনি নিজের মেধা ও অধ্যবসায় দিয়ে ইতিহাসে স্থান করে নেন।
পিয়ের কুরি ছিলেন শান্ত ও সহৃদয় গবেষক, যিনি স্ত্রীর প্রতিভাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাদের সম্পর্ক কেবল দাম্পত্য জীবনে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার অনন্য উদাহরণ। ১৯০৬ সালে দুর্ঘটনায় পিয়ের মারা গেলে মারি ভেঙে পড়লেও গবেষণা ছাড়েননি। বরং তিনি আরও দৃঢ় সংকল্পে ল্যাবরেটরিতে ফিরে আসেন।
তাদের দুই কন্যাও মায়ের পথ অনুসরণ করেছিলেন। ইরিন বিজ্ঞানি হয়ে নোবেল পান, আর ইভ কুরি সাহিত্য ও সমাজসেবায় খ্যাতি অর্জন করেন। ইভের লেখা Madame Curie বইটি আজও জীবনী সাহিত্যে ক্লাসিক হিসেবে গণ্য হয়। এভাবেই কুরি পরিবার শুধু বিজ্ঞানে নয়, সংস্কৃতি ও মানবিকতায়ও নিজেদের উত্তরাধিকার সমৃদ্ধ করেছে।
কুরি পরিবারের উত্তরাধিকার
আজও কুরি পরিবারের অবদান আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যমান। ক্যানসার চিকিৎসার রেডিয়েশন থেরাপি, পারমাণবিক শক্তির গবেষণা কিংবা মৌলিক পদার্থবিদ্যা—সবখানেই তাদের কাজের ছাপ রয়েছে। শুধু বিজ্ঞান নয়, তাদের জীবন আমাদের শেখায় অধ্যবসায়, ত্যাগ আর জ্ঞানের জন্য সংগ্রাম কেমন করে মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
প্যানথিয়নে সমাহিত হওয়া মানে ফরাসি জাতির শ্রেষ্ঠদের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া। মাদাম কুরি সেখানে একমাত্র নারী যিনি কেবল নিজের যোগ্যতায় সেই মর্যাদা অর্জন করেছেন। তার পাশে শায়িত আছেন জীবনসঙ্গী ও গবেষণার সহযাত্রী পিয়ের কুরি। তাদের সমাধি নিছক দুটি কফিন নয়, বরং একটি জাতি এবং সমগ্র বিশ্বের কৃতজ্ঞতার প্রতীক।
বিজ্ঞান কেবল গবেষণাগারের চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ থাকে না; তা মানুষের জীবন বদলে দেয়, সমাজকে এগিয়ে নেয়। মাদাম কুরি ও তার পরিবার এর উজ্জ্বল উদাহরণ। এক পরিবারের হাতে তিনটি নোবেল পুরস্কার ওঠা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়, বরং জ্ঞানের জন্য নিরলস সাধনার প্রতিফলন।
আজ যখন আমি প্যারিসের প্যানথিয়নে তাদের সমাধির সামনে দাঁড়িয়ে থাকি, তখন কেবল ইতিহাস নয়—মানবতার অগ্রযাত্রার এক শক্তিশালী প্রতীককে সামনে দেখি। মনে হয়, যত অন্ধকারই হোক, জ্ঞানের আলো শেষ পর্যন্ত মানবসভ্যতার পথ আলোকিত করবেই।
*লেখক : প্রধান সম্পাদক, সিলেটপিডিয়া। ইমেইল: <[email protected]>
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাচনিক প্রতিবছর একজন বাচিকশিল্পী বা কবিতার মানুষকে সম্মাননা প্রদান করে। যুগপূর্তির উৎসবে আবৃত্তি শিল্পী, সংগঠক এবং প্রশিক্ষক শিমুল মুস্তাফা ও কবি অপরাহ্ন সুসমিতোকে বাচনিক সম্মাননা দেওয়া হবে।
মানবসভ্যতার ইতিহাসে এমন পরিবার খুব কমই আছে, যাদের অবদান বিজ্ঞানের জগতে এত গভীর রেখাপাত করেছে, আবার একইসাথে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, বিশেষ করে নোবেল পুরস্কার তাদের কাছে একের পর এক ধরা দিয়েছে। মাদাম কুরি ও তার পরিবার সেই বিরল দৃষ্টান্ত।
মনীষী ওকাকুরা দুবার ভারতবর্ষ ভ্রমণ করে ভারতকে আবিষ্কার করেছিলেন একবার ১৯০২ সালে এবং আরেকবার ১৯১২ সালে। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৬ থেকে ১৯২৯ সালের মধ্যে পাঁচবার জাপান ভ্রমণ করে জাপানকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। দুজন-দুজনের চিন্তাদ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছেন।
সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার এক ঝাঁক এনথুসিয়াস্টিক ডাক্তারদের সাথে আমি হোয়াটসঅ্যাপে একটা গ্রুপে জড়িত। সেদিন দেখলাম সোনার বাংলা ফাউন্ডেশন বাপ্পা মজুমদারকে আনছে, ফান্ডরাইজ করবে দেশে গরিব রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়ার জন্য।