logo
খবর

শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের ৫৬তম শাহাদাতবার্ষিকী পালন বিমানবাহিনীর

বিডিজেন ডেস্ক
বিডিজেন ডেস্ক১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Copied!
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের ৫৬তম শাহাদাতবার্ষিকী পালন বিমানবাহিনীর

শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের ৫৬তম শাহাদাতবার্ষিকী পালন করেছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। এ উপলক্ষে চট্টগ্রামের বিমানবাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হকের কেন্দ্রীয় মসজিদে শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বাদ ফজর এক মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মিলাদ শেষে তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

মিলাদ মাহফিলে বিমানবাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হকের অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল হায়দার আব্দুল্লাহসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিমানসেনা ও অন্য পদবীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায় আন্তবাহিনী ও জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

উল্লেখ্য, অবিভক্ত পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বাঙালি সদস্য ছিলেন সার্জেন্ট জহুরুল হক। ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় আগরতলা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

১৯৬৮ সালের ৬ জানুয়ারি সরকারিভাবে ২ জন সিএসপি অফিসারসহ ২৮ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়। সরকারি প্রেসনোটে বলা হয়, 'গত মাসে (১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর) পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় স্বার্থবিরোধী এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।'

পাকিস্তান সরকার আগরতলা মামলাটির সরকারি নাম দিয়েছিল 'রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্যদের বিচার।’ এই মামলায় ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। প্রথমে অভিযুক্তদের 'দেশরক্ষা আইন' থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরে 'সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী অ্যাক্টে' সার্জেন্ট জহুরুল হকসহ অন্য অভিযুক্তদের পুনরায় গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের সামরিক সরকার। এরপর তাদের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকা সেনানিবাসে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১৯ জুন মামলাটির শুনানি কার্যক্রম শুরু হয়। মামলায় সার্জেন্ট জহুরুল হক ছিলেন ১৭ নম্বর অভিযুক্ত।

রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্যদের বিচার শিরোনামের মামলার অভিযোগনামায় বলা হয়েছিল, 'অভিযুক্তরা ভারতীয় অর্থ ও অস্ত্রের সাহায্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ ঘটিয়ে কেন্দ্র থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে চেয়েছিল।'

মামলার বিচারের স্থান হিসেবে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে অবস্থিত 'সিগন্যাল অফিসার মেস' নির্ধারণ করা হয়। মামলার শেষ তারিখ ছিল ১৯৬৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি।

এই মামলার শেষ দিকে ছাত্র জনতার তীব্র গণঅভ্যুত্থানের মুখে পাকিস্তানের সামরিক শাসক ও প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সরকার আগরতলা মামলা প্রত্যাহার এবং গোটা পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করতে বাধ্য হয়।

এদিকে ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকা সেনানিবাসের সেলে প্রতিদিনের মতো খাবার খাচ্ছিলেন সার্জেন্ট জহুরুল হকসহ অন্য অভিযুক্তরা। খাবার শেষ হওয়ার একটু আগে অন্য দিনের মতো উচ্ছিষ্ট সংগ্রহের জন্য শিশুরা ভিড় জমায় কাঁটাতারের বাইরে। এ সময় হঠাৎ বন্দীদের পাহারায় নিয়োজিত মনজুর শাহ (পাকিস্তানি) নামে একজন হাবিলদার শিশুদের গালাগাল করতে থাকে। তখন বন্দীরা প্রতিবাদ করে বলেন, 'আমরা তো আমাদের খাবার থেকে খাবার বাঁচিয়ে ওদের দিচ্ছি।' হাবিলদার মনজুর শাহ এ ব্যাপারে কথা না বলে বন্দীদের নিজ নিজ কামরায় ফিরে যেতে বলে কয়েকজন শিশুকে ধরে এনে লাথি মারতে শুরু করে। মনজুর শাহের এই আচরণে প্রচণ্ড রেগে যান সার্জেন্ট জহুরুল হক। তিনি কথা বলতে গেলে মনজুর শাহ রাইফেল নিয়ে জহুরুল হকের দিকে এগিয়ে যান।

এ সময় মনজুর শাহের হাত থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে জহুরুল হক বলেন, `তোমাদের হাতে অস্ত্র আছে তাই এত ক্ষমতা দেখাচ্ছ। চাইলে আমরা খালি হাতে এই ক্যান্টনমেন্ট দখল করতে পারি।' এরপর তিনি রাইফেলটি মনজুর শাহের দিকে ছুঁড়ে দেন। নিরস্ত্র একজন বাঙালি অভিযুক্ত এভাবে প্রতিবাদ করে রাইফেল ছুঁড়ে মারবে, পাকিস্তানি মনজুর শাহ হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি।

পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে অন্য বন্দীদের সঙ্গে জহুরুল হক তার সেল থেকে বের হলে মনজুর শাহ রাইফেল তাক করে তার দিকে এগিয়ে এসে বলে, `কাল তোর সাহস দেখেছি। কিন্তু আজ আমি তোদের মেরে ফেলব।'

Sergeant Zahurul Haque

সার্জেন্ট জহুরুল হক বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে মনজুর শাহের দিকে তাকিয়ে থাকেন। তখনই গুলি চালায় মনজুর শাহ। গুলি সার্জেন্ট জহুরুল হকের পেটে লাগে। তিনি লুটিয়ে পড়েন। আরেকটি গুলিতে লুটিয়ে পড়েন তার সঙ্গে বন্দী ফজলুল হকও।

এরপর জহুরুল হকের পেটের ওপর উঠে বেয়নেট নিয়ে খোঁচাতে শুরু করে মনজুর শাহ। একইসঙ্গে বুটের আঘাত। বুটের আঘাতে সার্জেন্ট জহুরুল হকের কলার বোন ভেঙে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ১০টার দিকে তিনি মারা যান।

সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যাকাণ্ডের ফলে আইয়ুববিরোধী গণঅভ্যুত্থান আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যার খবর পাওয়ার পর বিক্ষুব্ধ জনতা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ও সরকারি নানা কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। অতিথি ভবনে তখন ছিলেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এস এ রহমান ও প্রধান সরকারি কৌঁসুলি মঞ্জুর কাদের। বিক্ষুব্ধ জনতার হামলার ঘটনায় ২ জনেই প্রাণের ভয়ে পালিয়ে যান। পুড়ে যায় মামলার কিছু নথিপত্র।

প্রবল গণআন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত ২২ ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান আগরতলা মামলা প্রত্যাহার এবং সব অভিযুক্তকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হন। এরপর বিরোধী নেতাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠক ডাকেন। সেই বৈঠক ব্যর্থ হলে এক মাসের ব্যবধানে ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ আইয়ুব খান পদত্যাগ করেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে অনন্য বীর হিসেবে উচ্চারিত শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের নাম। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে তার নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের অন্যতম তিনি। ১৯৬৯ সালে তাকে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইয়ুববিরোধী গণঅভ্যুত্থান পেয়েছিল চূড়ান্ত মাত্রা।

সার্জেন্ট জহুরুল হকের জন্ম ১৯৩৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর সদর উপজেলার সোনাপুর গ্রামে। সোনাপুর মিশনারি স্কুলে ভর্তির মধ্য দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় হাতেখড়ি হয়ে তার। পরে নোয়াখালী জেলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পাস করে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন জগন্নাথ কলেজে।

এ সময় তিনি যোগ দিয়েছিলেন ইউওসিটিতে। শিল্প প্রতিভাও ছিল তার। কাঠ খোদাই করে নানা রকম শিল্পকর্ম করতেন। কাঠের ছোট ছোট টুকরো সংযুক্ত আঁকতেন ছবি। ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর তিনি যোগ দেন পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে। গ্রাউন্ড ইন্সট্রাক্টর হিসেবে তার প্রথম কর্মস্থল ছিল বর্তমান পাকিস্তানে।

দেশের মুক্তির লক্ষ্যে তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্র হলের নামকরণ করা হয় ‘সার্জেন্ট জহুরুল হক হল’ এবং ১৯৮২ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটির নামকরণ করা হয় ‘বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক’।

২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে।

আরও পড়ুন

সৌদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রবাসী কর্মী নিয়ে চুক্তি হবে, যা ভারত-পাকিস্তানেরও নেই: উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

সৌদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রবাসী কর্মী নিয়ে চুক্তি হবে, যা ভারত-পাকিস্তানেরও নেই: উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

সৌদি আরবের সঙ্গে প্রবাসী কর্মী ও কর্মসংস্থান নিয়ে একটি চুক্তি সই করা হচ্ছে বলে জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে এটা জানতে পারবেন। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সৌদি আরবের সঙ্গে প্রবাসী কর্মীদের নিয়ে একটি চুক্তি হচ্ছে।

২ ঘণ্টা আগে

জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত, ৫ আগস্ট উপস্থাপন করা হবে: প্রেস সচিব

জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত, ৫ আগস্ট উপস্থাপন করা হবে: প্রেস সচিব

জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ৫ আগস্ট বিকেল ৫টায় জাতির সামনে জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করা হবে। শনিবার (২ আগস্ট) দুপুর ১২টার পর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়ে এ কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

২ ঘণ্টা আগে

ইতালির মর্যাদাপূর্ণ চিভিতেলা রানিয়েরি ফেলোশিপ পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক মশিউল আলম

ইতালির মর্যাদাপূর্ণ চিভিতেলা রানিয়েরি ফেলোশিপ পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক মশিউল আলম

বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও অনুবাদক মশিউল আলম ইতালির চিভিতেলা রানিয়েরি ফেলোশিপে ভূষিত হয়েছেন। এই আন্তর্জাতিক সম্মাননা প্রতিবছর বিশ্বের খ্যাতিমান ভিজ্যুয়াল শিল্পী, লেখক ও সংগীতজ্ঞদের দেওয়া হয়। মশিউল আলম এই ফেলোশিপপ্রাপ্ত প্রথম বাংলাদেশি লেখক।

২ ঘণ্টা আগে

যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরত এলেন আরও ৩৯ বাংলাদেশি

যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরত এলেন আরও ৩৯ বাংলাদেশি

যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরত এসেছেন আরও ৩৯ বাংলাদেশি। একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ঢাকায় ফেরত আসেন তারা। আজ শনিবার (২ আগস্ট) সকালে রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় দলটি।

১৬ ঘণ্টা আগে