logo
খবর

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ নিয়ন্ত্রণমূলক অধ্যাদেশে পরিণত হয়েছে: টিআইবি

প্রতিবেদক, বিডিজেন৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
Copied!
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ নিয়ন্ত্রণমূলক অধ্যাদেশে পরিণত হয়েছে: টিআইবি
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪ নিয়ে টিআইবির পর্যালোচনা ও সুপারিশ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন। ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪। ছবি:: সংগৃহীত

অনুমোদিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়ায় আগের বিতর্কিত দুটি আইনের প্রতিফলন ঘটেছে বলে উল্লেখ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, বাক্‌স্বাধীনতা–মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে এটি নিয়ন্ত্রণমূলক ও নজরদারির অধ্যাদেশে পরিণত হয়েছে। এখানে অধিকারের কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। বরং মতপ্রকাশকে খর্ব করার প্রক্রিয়া দেখা যায়।

আজ মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪ নিয়ে সংস্থাটির পর্যালোচনা ও সুপারিশ জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে যুক্ত হয়ে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালয়ার আইন ও উদীয়মান প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ এরশাদুল করিম পর্যালোচনা ও সুপারিশ তুলে ধরেন। তিনি অনুমোদিত অধ্যাদেশের ধারাগুলো ধরে ধরে বিশ্লেষণ করেন।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যেভাবে অধ্যাদেশটি প্রণীত হয়েছে, তা নিয়ে আপত্তি আছে। মোটেই সময় দেওয়া হয়নি আলোচনার জন্য। এটা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আশা করিনি।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের ৭ নভেম্বরের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। ১ ডিসেম্বর সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের ওয়েবসাইটে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪-এর খসড়া প্রকাশ করে ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে মতামত চাওয়া হয়। ২৪ ডিসেম্বর উপদেষ্টা পরিষদ অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেয়।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটা একটা জগাখিচুড়ির অধ্যাদেশ হয়েছে। সাইবার, ইন্টারনেট, ডিজিটাল—সব মিলিয়ে জগাখিচুড়ি করেছে। সাইবার সুরক্ষার নাম হলেও আগের ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের একধরনের পুনরাবৃত্তি এটি। বাক্‌স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে এটি নিয়ন্ত্রণমূলক ও নজরদারির অধ্যাদেশে পরিণত হয়েছে। ডিজিটাল অধিকারের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু পুরো অধ্যাদেশে অধিকারের কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। বরং মতপ্রকাশকে খর্ব করার প্রক্রিয়া দেখা যায়, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, একটি বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে অঙ্গীকার ছিল, সাইবার আইন বাতিল হবে, যা তারা করেছে। সবার অংশগ্রহণপ্রক্রিয়ায় আইন হবে, সে কথাও ছিল। কিন্তু সেখান থেকে কেন সরে এল, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁর ধারণা, এ ক্ষেত্রেও আমলানির্ভরতা ছিল।

বিশ্লেষণে বলা হয়, অধ্যাদেশে সাইবার সুরক্ষা এজেন্সির মহাপরিচালক ও পুলিশকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা সাইবার নিরাপত্তা আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এখানে অনেক শব্দের ব্যাখ্যা নেই, ভাষা দুর্বোধ্য। এতে অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে। ধারা ৮, ২৫, ২৬, ৩৫ আগের মতো নিবর্তনমূলক। এ ধরনের আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও দেশের বিদ্যমান দক্ষতা বিবেচনায় না নিয়ে, এমনকি অংশীজনদের কেন সম্পৃক্ত করা হলো না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ধর্মীয় মূল্যবোধের ব্যাখ্যা থাকতে হবে। পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক মানুষের সম–অধিকার ও বৈষম্যবিরোধী চেতনার বিষয় থাকতে হবে। সার্বিকভাবে ঢেলে সাজানোর আগে অধ্যাদেশটি গ্রহণযোগ্য নয়। এতে জনস্বার্থের প্রতিফলন নেই। বরং মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হবে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ আইনের দরকার আছে। বরং একাধিক আইনের প্রয়োজন। কিন্তু তড়িঘড়ি করে করা হয়েছে। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে এভাবে অনুমোদন হওয়ায় তাঁরা খুব হতবাক হয়েছেন।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অধ্যাদেশটির সম্ভাব্য ব্যবহার প্রসঙ্গে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এখানে বিগত সরকারের বয়ানের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। আগের দুটি আইনেও বলা হয়েছিল, তা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যাবে না। এবারও সেই একই কথা শোনা গেল। কিন্তু অনুমোদিত অধ্যাদেশে তা দেখা যাচ্ছে না। এভাবে আইন হয়ে গেলে তা সংবাদমাধ্যমসহ সব মানুষের তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতা, বাক্স্বাধীনতা ও সংগঠনের স্বাধীনতা ঝুঁকিতে পড়বে।

অনুমোদিত অধ্যাদেশের খসড়া সরকারের কোনো ওয়েবসাইটে না থাকার প্রসঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, যে মন্ত্রণালয়ের অধীনে হচ্ছে, তাদের দায়িত্ব ছিল এটি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা। এটা নিয়ে লুকোছাপা করার কিছু নেই, উন্মুক্ত করা উচিত। দেশের আইন মানুষের জন্য। এটা নিয়ে লুকোচুরি কেন হবে?

টিআইবি জানিয়েছে, সংস্থার এই বিশ্লেষণ সরকারের কাছে পাঠানো হবে। সরকার যেন এটিকে বিবেচনায় নিয়ে সবার অভিমত নিয়ে আইন করে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের।

আরও দেখুন

মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কথা বলে প্রতারণা, দুই রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ ১০ ভুক্তভোগীর

মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কথা বলে প্রতারণা, দুই রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ ১০ ভুক্তভোগীর

ভুক্তভোগীরা বিডিজেনকে জানান, তারা বিভিন্ন সময় ধাপে ধাপে প্রায় ৪ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা বগুড়ায় বসবাসকারী একজন দালালের মাধ্যমে রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে জমা দিয়েছিলেন। ওই দালাল অভিযুক্ত দুই এজেন্সির হয়ে কাজ করেন। গত দুই বছরের বেশি সময়েও ভুক্তভোগীরা বিদেশ যেতে না পারায় বাধ্য হয়ে বিএমইটিতে অভিযোগ করেন।

১ দিন আগে

আন্তর্জাতিক ও জাতীয় অভিবাসী দিবস আজ

আন্তর্জাতিক ও জাতীয় অভিবাসী দিবস আজ

আন্তর্জাতিক ও জাতীয় অভিবাসী দিবস আজ ১৮ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার)। অভিবাসী ও তাদের পরিবারের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতি বছরের এই দিনে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের পাশাপাশি জাতীয় অভিবাসী দিবস হিসেবে পালিত হয়।

১ দিন আগে

বিদেশে কর্মী পাঠাতে দালাল ও প্রতারণামুক্ত ব্যবস্থা গড়ার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধান উপদেষ্টার

বিদেশে কর্মী পাঠাতে দালাল ও প্রতারণামুক্ত ব্যবস্থা গড়ার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধান উপদেষ্টার

গ্রামীণ ব্যাংকের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গ্রামাঞ্চলের নারীরা সন্তানদের বিদেশে পাঠাতে ঋণের জন্য আবেদন জানাতে শুরু করলে প্রথম দালালচক্রের বাস্তব চিত্র তার সামনে আসে।

২ দিন আগে

লিবিয়ায় ৩ বাংলাদেশিকে অপহরণ করে ৬৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি, অভিযোগ পরিবারের

লিবিয়ায় ৩ বাংলাদেশিকে অপহরণ করে ৬৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি, অভিযোগ পরিবারের

লিবিয়ায় তিন বাংলাদেশিকে অপহরণের পর মুক্তিপণের দাবিতে শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও চিত্র পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তাদের পরিবার। অপহরণকারী চক্রটি ডাচ বাংলা ব্যাংকের মতিঝিল করপোরেট শাখার একটি হিসাব নম্বরে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেছে।

৫ দিন আগে