logo
খবর

স্বপ্নের খোঁজে প্রবাসে পাড়ি: ১৮ তরুণ-যুবক কোথায়, ৯ মাস ধরে জানে না পরিবার

বিডিজেন ডেস্ক
বিডিজেন ডেস্ক১২ ডিসেম্বর ২০২৪
Copied!
স্বপ্নের খোঁজে প্রবাসে পাড়ি: ১৮ তরুণ-যুবক কোথায়, ৯ মাস ধরে জানে না পরিবার
ইতালি যাওয়ার পথে লিবিয়ায় গিয়ে নিখোঁজ শরীয়তপুরের ১৮ তরুণ ও যুবক। তাদের সন্ধানের দাবিতে করা মানববন্ধনে স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে। ৮ ডিসেম্বর ২০২৪। ছবি: প্রথম আলো

দেশে কেউ কৃষিকাজ করতেন, কেউ ছিলেন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। কেউবা পড়ালেখা করতেন। এমন ১৮ তরুণ-যুবক পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে স্বপ্নের খোঁজে দালালের মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার জন্য ঘর ছাড়েন। কিন্তু তারা ইতালি পৌঁছাতে পারেননি। তারা এখন কোথায় আছেন, তা জানেন না স্বজনেরা। ৯ মাস ধরে তাদের সন্ধান দিতে পারছেন না কেউ। তাদের সন্ধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেও ফল হয়নি।

শরীয়তপুরের সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ওই ১৮ তরুণ ও যুবকের স্বজনেরা প্রিয়জনের অপেক্ষায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। নিখোঁজ স্বজনদের সন্ধান চেয়ে তাদের পরিবারের সদস্যরা ৮ ডিসেম্বর রোববার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন। জেলা প্রশাসকের কাছে দিয়েছেন স্মারকলিপি।

খবর প্রথম আলোর।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা জানান, আংগারিয়া ইউনিয়নের চরযাদবপুর গ্রামের রাশেদ খান দুই সহযোগীর মাধ্যমে শরীয়তপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক সংগ্রহ করে বিভিন্ন দেশে পাঠান। লামিসা এন্টারপ্রাইজ নামের তাঁর একটি প্রতিষ্ঠান আছে। ২০২২ ও ২০২৩ সালে সদর উপজেলার দক্ষিণ মধ্যপাড়া এলাকার আল আমিন ভূঁইয়া, দক্ষিণ ভাসানচরের দিদার হোসেন, মোহাম্মদ ফারুক সরদার, নতুন হাট এলাকার আলদিন রিমন, চর নেয়ামতপুর এলাকার রাশিদুল, সিরাজ, আতিকুর রহমান, চর ভাসানচরের আমিনুল ইসলাম, চাপাতলীর সরদার সাদেকুল, চরচাটাং এলাকার মিরাজ ওঝা, রফিক মোড়ল, শামীম গাজী, জাগীর এলাকার মোহাম্মদ পারভেজ, দরিচর দাদপুরের জাফর শেখ, জাফরাবাদের দিপু সিকদার, ত্রিভাগাদির শাহজাহান হাওলাদার, কদমতলী এলাকার শাহীন সিকদার, সূর্যমনির সাইফুল ইসলামসহ ১৮ যুবক ও তরুণকে অবৈধ পথে লিবিয়া হয়ে ইতালি পাঠানোর জন্য বাড়ি থেকে নিয়ে যান। এ জন্য পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে ১২ থেকে ২০ লাখ টাকা করে নেয় দালাল।

স্বজনেরা জানান, ওই ১৮ জনকে প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর হয়ে লিবিয়ায় নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজন লিবিয়ায় দুই দফা পুলিশের হাতে আটক হয়ে কারাগারে যান। কয়েকজনকে জিম্মি করে নির্যাতন করা হয়। পরে স্বজনদের থেকে টাকা নিয়ে তারা জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পান। কিন্তু গত ২১ ও ২২ মার্চ থেকে ওই ১৮ জনের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছেন না স্বজনেরা। তারা কোথায় কীভাবে আছেন, তা-ও জানেন না স্বজনেরা। দালাল রাশেদ গ্রামের বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন। তার ঢাকার পল্টনের কার্যালয়টিও বন্ধ। স্বজনেরা সন্ধান চেয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন।

৮ ডিসেম্বর ওই ১৮ ব্যক্তির স্বজনেরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। বেলা ১১টার দিকে তারা স্বজনদের সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন করেন। কর্মসূচির পর জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন।

৪ বছর বয়সী শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে মানববন্ধনে আসেন লাবনি আক্তার। তাঁর স্বামী সাইফুল ইসলাম ইতালি যাওয়ার পথে লিবিয়ায় নিখোঁজ হয়েছেন। লাবনি প্রথম আলোকে বলেন, ২২ মার্চ সর্বশেষ স্বামীর সঙ্গে কথা হয়। তখন জানিয়েছিলেন, তারা সমুদ্রপথে লিবিয়া থেকে ইতালিতে যাত্রা করবেন। এরপর ৯ মাসের বেশি সময় হয়ে গেছে, তাঁর কোনো সন্ধান পাচ্ছেন না।

আয়েশা আক্তারের স্বামী সিরাজ মৃধা (৩৫) নিয়ামতপুর গ্রামে কৃষিকাজ করতেন। তিন শিশুসন্তান নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। স্বপ্নের খোঁজে ঋণ করে স্বামীকে ইতালিতে পাঠান। এ জন্য রাশেদকে ৫ লাখ টাকা দেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সিরাজ গ্রাম ছাড়েন। প্রথমে তাঁকে দুবাইতে নেওয়া হয়। এরপর যান মিসর। সেখান থেকে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে নেওয়া হয়। এরপর কিছুদিন রাখার পর ট্রলারে সমুদ্রপথে ইতালি নেওয়ার উদ্যোগ নেয় দালাল চক্র। এর মধ্যে সিরাজকে লিবিয়ার একটি চক্র জিম্মি করে স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ চায়। স্বামীকে বাঁচাতে আয়েশা ৬ শতাংশ জমিসহ বসতবাড়ি বিক্রি করে চক্রের কাছে ৮ লাখ টাকা পাঠান। সিরাজ ২১ মার্চ ফোন করে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। এরপর আর কোনো খোঁজ নেই।

সদরের দক্ষিণ মধ্যপাড়া এলাকার আল আমিন ভূঁইয়া (২৫) ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ছিলেন। সংসারের অভাব দূর করতে তিনিও সিরাজের মতো রাশেদকে সাড়ে ১২ লাখ টাকা দিয়ে ২০২৩ সালের জুনে বাড়ি ছাড়েন। তাঁকে সিরাজের মতো করে লিবিয়ায় নেওয়া হয়। এরপর পুলিশের হাতে আটকে ৭৫ দিন জেল খাটেন আল আমিন। এরপর সমুদ্রপথে ইতালি নিতে তাঁকে ত্রিপোলি শহরে নেওয়া হয়। ২২ মার্চ থেকে তাঁর সঙ্গে স্বজনদের যোগাযোগ নেই।

আল আমিনের বাবা চুন্নু ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ভাড়ায় গাড়ি চালান। ২০ শতাংশ জমি বিক্রি করে ছেলেকে ইতালি পাঠাতে দালালকে দেন। এখন আট মাস ধরে ছেলের সন্ধান পাচ্ছেন না। দালালের কাছে গেলে বলে, ‘ছেলে ভালো আছে, শিগগিরই ইতালি যাবে।’ তিন মাস ধরে দালালও পলাতক। তাঁরা জানেন না, ছেলেগুলোর ভাগ্যে কী ঘটেছে।

জনশক্তি ব্যবসায়ী রাশেদ খানের গ্রামের বাড়ি চর যাদবপুরে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। বসতঘর তালাবদ্ধ করে তিনি স্বজনদের নিয়ে পালিয়েছেন। তাঁর চাচাতো ভাই আব্দুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাশেদ বাংলাদেশেই আত্মগোপন করে আছে। সে-ও ওই ব্যক্তিদের প্রকৃত সন্ধান বলতে পারছে না। লিবিয়ার দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা কোথায় আছেন, তা জানার চেষ্টা করছে।’

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ১৮ ব্যক্তি মানব পাচারের শিকার হয়েছেন—বিক্ষিপ্তভাবে তাঁর কাছে এমন তথ্য এসেছে। ভুক্তভোগী পরিবার মামলা করলে তারা আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারবেন। এখন যেহেতু বিষয়টি তারা জেনেছেন, ছায়া তদন্ত শুরু করবেন।

সূত্র: প্রথম আলো

আরও পড়ুন

ফেসবুক লাইভে উমামা ফাতেমা: জুলাইকে ‘মানি মেকিং মেশিনে’ পরিণত করা হয়েছে

ফেসবুক লাইভে উমামা ফাতেমা: জুলাইকে ‘মানি মেকিং মেশিনে’ পরিণত করা হয়েছে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে থাকাটা তাঁর জীবনের একটা 'ট্র্যাজিক' ঘটনা ছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্ল্যাটফর্মটির সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।

৪ ঘণ্টা আগে

১২ হাজার তরুণ–তরুণীকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেবে পিকেএসএফ

১২ হাজার তরুণ–তরুণীকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেবে পিকেএসএফ

প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণার্থী তরুণেরা ১২টি খাতের প্রশিক্ষণ পাবে। প্রশিক্ষণ চলাকালে থাকা-খাওয়ার সব খরচ প্রকল্প থেকে বহন করা হবে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। বাকি ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে নিম্ন আয়ের ও প্রান্তিক অঞ্চলের তরুণেরা।

৬ ঘণ্টা আগে

রাজধানীর আকাশ প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে বিমানঘাঁটি অত্যাবশ্যক: বিমান বাহিনী

রাজধানীর আকাশ প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে বিমানঘাঁটি অত্যাবশ্যক: বিমান বাহিনী

রাজধানীর আকাশ প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে ঢাকায় বিমানঘাঁটি অত্যাবশ্যক বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী।

৭ ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই: যুক্তরাষ্ট্রের দূতকে প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই: যুক্তরাষ্ট্রের দূতকে প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না।

৭ ঘণ্টা আগে