

শরীফুল আলম

সম্প্রতি আফগানিস্তানে এক ভয়াবহ ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এই প্রসঙ্গ নিয়েই আজকের লেখা।
আফগানিস্তানে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এখন তালেবান। যদিও তালেবান সরকার এখনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। দেশটিতে যে নজিরবিহীন সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ বাস্তবতা বিবর্জিত। যেমন শরিয়া আইন। এই আইন অনুযায়ী, আদালত যদি কোনো মামলা নিষ্পত্তির জন্য কোনো আইনের বিধান খুঁজে না পায় সেই ক্ষেত্রে শিয়া ফিকাহের মাধ্যমে তার মিমাংসা করতে হবে। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক যারা হবেন তাকে অবশ্যই ইসলামি ফিকাহ বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।
অন্যদিকে দেশটিতে বিজ্ঞাপন ও টেলিভিশনে নারীদের মুখ দেখানো সেখানে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ, পরিবারের কোনো পুরুষ সদস্য ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না।
চরম পুরুষতান্ত্রিক এক দেশের নাম আফগানিস্তান। বাইরে গিয়ে কোনো নারী কাজ করতে পারবে না। নারীদের মূল্যবোধ সেখানে পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, অথচ নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই আফগান সংস্কৃতিরই একজন।
আফগানিস্তানের পুলিশ স্বাভাবিক পুলিশ নয়। বড় জোর তাদেরকে ধর্মীয় পুলিশ বলা যেতে পারে। তারা ইসলামী শরিয়াকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। কে দাড়ি কাটল, কার দাড়ি কতটুকু বড় হয়েছে কিংবা ছোট হয়েছে কেন? তার জন্য জরিমানা আরোপ করা, আর কী কী করা যাবে কিংবা কী কী করা যাবে না, এগুলো প্রচার করাই যেন সেখানকার পুলিশের প্রধান কাজ।
আফগান নারীদের জন্য রাষ্ট্র আছে কিন্তু তাদের কোনো অধিকার নেই। অবস্থা দেখে মনে হয়, আফগান দেশটা কেবল পুরুষদের, নারীদের জন্য নয়। জাতিসংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এখন আর নারী কর্মীরা কাজ করতে পারে না। জিম, পার্ক, সিনেমা হল কিংবা মেলায় নারীদের যাওয়া নিষেধ। এই সমস্ত কারণে আফগানিস্তানে বিদেশি সহায়তা এখন প্রায় বন্ধ। ফলে ক্ষুধা ও অসুস্থতায় ভুগছে দেশটি।
আফগানিস্থানে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এর জন্য অবশ্য সেখানকার অসম আইনকানুনই দায়ী। ফায়ার ফাইটার ও অন্য রেসকিউ পুরুষ সদস্যদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা ছিল, তারা কেউ যেন কোনো নারীর শরীর স্পর্শ না করে। এ কারণে অনেক আহত নারীকে উদ্ধার করা হয়নি। এমনকি বহু নারীকে বিনা গোসলেই দাফন করা হয় শুধুমাত্র নারী গোসলকারী না পাওয়ার কারণে। আফগানিস্তানে পাপ ও পূণ্য মন্ত্রণালয় আছে, সেখান থেকে ঘন ঘন আইন না ভাঙ্গার অনুরোধ জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সেখানে পুরুষ চিকিৎসকদের নারী রোগীর চিকিৎসায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
যাহোক যা বলছিলাম, ভূমিকম্পটি শুরু হয় সকাল আনুমানিক ১১টায়। ফলে অধিকাংশ পুরুষ সেসময় বাড়িঘরে ছিল না। আর নারীদের যেহেতু বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষেধ, তাই তারা ঘরেই ছিল। এরফলে ভূমিকম্পে নারী ও শিশু নিহতের সংখ্যাই বেশি ছিল।
এবার আসি ভূমিকম্প নিয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। উচ্চক্ষমতার একটি ভূমিকম্প হলে বাংলাদেশের কী অবস্থা হবে? এই প্রসঙ্গে ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই। কয়েক বছর আগে তুরস্ক ও সিরিয়ায় যে ভূমিকম্প হয়েছিল, তাতে এই দুই দেশের সর্বোচ্চ ক্ষতি হয়েছিল। তদন্তে দেখা যায় বিল্ডিং কোড না মেনে বহুতল ভবন নির্মাণই এই ক্ষতির জন্য দায়ী। তবে সমস্যাটা ওখানে নয়, সমস্যাটা হচ্ছে তুরস্ক সরকার নিয়ম বহির্ভূত বাড়ির মালিকদেরকে শুধু একটা ফাইন করেই ছেড়ে দেয়। ফলে ভূমিকম্পে বিপর্যয়টা ভয়াবহ রূপ নেয়।
আমাদের দেশে আমি চাই, যারাই আইন বহির্ভূতভাবে, বিল্ডিং কোড না মেনে বাড়িঘর নির্মাণ করবে, তাদের জরিমানা তো করতেই হবে, সেই সাথে নিজ দায়িত্বে বাড়ি ভেঙে নিয়ে যেতে হবে। ভুলে গেলে আমাদের চলবে না, বাংলাদেশ এখন অতি উচ্চক্ষমতার ভূমিকম্পের একেবারে দ্বারপ্রান্তে আছে।
১৮২২ সালে একবার হয়েছিল আর শেষবারে হয়েছে ১৯১৮ সালে। ভূত্বত্তবিদদের মতে প্রতি ১০০ বছরে একবার ভূমিকম্প হওয়ার কথা। সেই হিসাবে বাংলাদেশে অতি নিকটেই আরেকটা ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ পারবে কি সেই বিপদ মোকাবিলা করতে। ভূমিকম্পের জন্য যে প্লেট কিংবা সাব প্লেটগুলো দায়ী, বাংলাদেশ এখন সেই প্লেটের ওপর স্থির দাঁড়িয়ে আছে। বিপর্যয় আমাদের অতি সন্নিকটে। আল্লাহ্ আমাদের সহায় হোন।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
*শরীফুল আলম: নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। ইমেইল: [email protected]

সম্প্রতি আফগানিস্তানে এক ভয়াবহ ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এই প্রসঙ্গ নিয়েই আজকের লেখা।
আফগানিস্তানে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এখন তালেবান। যদিও তালেবান সরকার এখনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। দেশটিতে যে নজিরবিহীন সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ বাস্তবতা বিবর্জিত। যেমন শরিয়া আইন। এই আইন অনুযায়ী, আদালত যদি কোনো মামলা নিষ্পত্তির জন্য কোনো আইনের বিধান খুঁজে না পায় সেই ক্ষেত্রে শিয়া ফিকাহের মাধ্যমে তার মিমাংসা করতে হবে। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক যারা হবেন তাকে অবশ্যই ইসলামি ফিকাহ বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।
অন্যদিকে দেশটিতে বিজ্ঞাপন ও টেলিভিশনে নারীদের মুখ দেখানো সেখানে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ, পরিবারের কোনো পুরুষ সদস্য ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না।
চরম পুরুষতান্ত্রিক এক দেশের নাম আফগানিস্তান। বাইরে গিয়ে কোনো নারী কাজ করতে পারবে না। নারীদের মূল্যবোধ সেখানে পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, অথচ নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই আফগান সংস্কৃতিরই একজন।
আফগানিস্তানের পুলিশ স্বাভাবিক পুলিশ নয়। বড় জোর তাদেরকে ধর্মীয় পুলিশ বলা যেতে পারে। তারা ইসলামী শরিয়াকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। কে দাড়ি কাটল, কার দাড়ি কতটুকু বড় হয়েছে কিংবা ছোট হয়েছে কেন? তার জন্য জরিমানা আরোপ করা, আর কী কী করা যাবে কিংবা কী কী করা যাবে না, এগুলো প্রচার করাই যেন সেখানকার পুলিশের প্রধান কাজ।
আফগান নারীদের জন্য রাষ্ট্র আছে কিন্তু তাদের কোনো অধিকার নেই। অবস্থা দেখে মনে হয়, আফগান দেশটা কেবল পুরুষদের, নারীদের জন্য নয়। জাতিসংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এখন আর নারী কর্মীরা কাজ করতে পারে না। জিম, পার্ক, সিনেমা হল কিংবা মেলায় নারীদের যাওয়া নিষেধ। এই সমস্ত কারণে আফগানিস্তানে বিদেশি সহায়তা এখন প্রায় বন্ধ। ফলে ক্ষুধা ও অসুস্থতায় ভুগছে দেশটি।
আফগানিস্থানে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এর জন্য অবশ্য সেখানকার অসম আইনকানুনই দায়ী। ফায়ার ফাইটার ও অন্য রেসকিউ পুরুষ সদস্যদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা ছিল, তারা কেউ যেন কোনো নারীর শরীর স্পর্শ না করে। এ কারণে অনেক আহত নারীকে উদ্ধার করা হয়নি। এমনকি বহু নারীকে বিনা গোসলেই দাফন করা হয় শুধুমাত্র নারী গোসলকারী না পাওয়ার কারণে। আফগানিস্তানে পাপ ও পূণ্য মন্ত্রণালয় আছে, সেখান থেকে ঘন ঘন আইন না ভাঙ্গার অনুরোধ জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সেখানে পুরুষ চিকিৎসকদের নারী রোগীর চিকিৎসায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
যাহোক যা বলছিলাম, ভূমিকম্পটি শুরু হয় সকাল আনুমানিক ১১টায়। ফলে অধিকাংশ পুরুষ সেসময় বাড়িঘরে ছিল না। আর নারীদের যেহেতু বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষেধ, তাই তারা ঘরেই ছিল। এরফলে ভূমিকম্পে নারী ও শিশু নিহতের সংখ্যাই বেশি ছিল।
এবার আসি ভূমিকম্প নিয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। উচ্চক্ষমতার একটি ভূমিকম্প হলে বাংলাদেশের কী অবস্থা হবে? এই প্রসঙ্গে ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই। কয়েক বছর আগে তুরস্ক ও সিরিয়ায় যে ভূমিকম্প হয়েছিল, তাতে এই দুই দেশের সর্বোচ্চ ক্ষতি হয়েছিল। তদন্তে দেখা যায় বিল্ডিং কোড না মেনে বহুতল ভবন নির্মাণই এই ক্ষতির জন্য দায়ী। তবে সমস্যাটা ওখানে নয়, সমস্যাটা হচ্ছে তুরস্ক সরকার নিয়ম বহির্ভূত বাড়ির মালিকদেরকে শুধু একটা ফাইন করেই ছেড়ে দেয়। ফলে ভূমিকম্পে বিপর্যয়টা ভয়াবহ রূপ নেয়।
আমাদের দেশে আমি চাই, যারাই আইন বহির্ভূতভাবে, বিল্ডিং কোড না মেনে বাড়িঘর নির্মাণ করবে, তাদের জরিমানা তো করতেই হবে, সেই সাথে নিজ দায়িত্বে বাড়ি ভেঙে নিয়ে যেতে হবে। ভুলে গেলে আমাদের চলবে না, বাংলাদেশ এখন অতি উচ্চক্ষমতার ভূমিকম্পের একেবারে দ্বারপ্রান্তে আছে।
১৮২২ সালে একবার হয়েছিল আর শেষবারে হয়েছে ১৯১৮ সালে। ভূত্বত্তবিদদের মতে প্রতি ১০০ বছরে একবার ভূমিকম্প হওয়ার কথা। সেই হিসাবে বাংলাদেশে অতি নিকটেই আরেকটা ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ পারবে কি সেই বিপদ মোকাবিলা করতে। ভূমিকম্পের জন্য যে প্লেট কিংবা সাব প্লেটগুলো দায়ী, বাংলাদেশ এখন সেই প্লেটের ওপর স্থির দাঁড়িয়ে আছে। বিপর্যয় আমাদের অতি সন্নিকটে। আল্লাহ্ আমাদের সহায় হোন।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
*শরীফুল আলম: নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। ইমেইল: [email protected]
দুপুরে ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে বাসায় ফিরছি। দেখি আরেকটা ট্রাক থেকে ওয়াশিং মেশিন নামাচ্ছে। বিরাট গাবদা সাইজ। দুই/তিনতলা সিঁড়ি বেয়ে ওঠাতে হবে। বেচারার গার্লফ্রেন্ড নেই পাশে। এবার দেখি ছেলেলা আমার দিকে তাকায়, ‘হাই’ দেয়।
ষাটের দশক শুধু জেইনের জীবন নয়, বদলে দিল এক পুরো প্রজন্মকে। মানুষ শিখল প্রশ্ন করতে, প্রতিবাদ করতে, আর ভালোবাসতে। সত্যিই, এক নতুন সময়ের জন্ম হয়েছিল।
ওমান রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি ভালো ভূমিকা রাখতে পারে তবে দীর্ঘমেয়াদে ওমানে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় হবে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা ও গবেষণাতেও অবদান রাখতে পারে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মজবুত করার জন্য রাজস্ব খাত ও আর্থিক খাতের সংস্কারকে সংহতভাবে এগিয়ে নিতে হবে। এটি শুধুমাত্র উন্নয়নের জন্য নয় বরং দেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।