
সহিদুল আলম স্বপন

১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর। ঢাকার জিরো পয়েন্টে এক তরুণ নিজের বুক ও পিঠে লিখেছিলেন দুটি বাক্য—‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’ এবং ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। পুলিশের গুলিতে মুহূর্তেই তার জীবন নিভে যায়, কিন্তু সেই মৃত্যুই যেন ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়ে তোলে।
সেই তরুণ নূর হোসেন—যিনি হয়ে উঠেছিলেন প্রতিবাদের প্রতীক, এক প্রজন্মের চেতনার নাম।
তখন দেশ সামরিক শাসনের ছায়ায় আচ্ছন্ন। রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কথার আড়ালে চলছিল মতপ্রকাশের দমন, সংবাদপত্রে সেন্সর, রাজনীতিতে ভয়। এমন এক সময় নূর হোসেন নিজের শরীরকে বানিয়েছিলেন প্রতিবাদের ক্যানভাস। তার আত্মত্যাগ প্রশ্ন তুলেছিল—আমরা কি সত্যিই স্বাধীন?
নূর হোসেনের মৃত্যু শুধু এক রাজনৈতিক ঘটনার সমাপ্তি নয়; বরং এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। তার রক্তে লেখা সেই আহ্বানই পরিণতি পায় ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে। তিন দশক পর ইতিহাস যেন আবার ফিরে এসেছে নতুন প্রজন্মের মুখে, নতুন পরিপ্রেক্ষিতে।
২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে তরুণেরা আবার নেমে আসে রাজপথে। প্রথমে কোটা সংস্কারের দাবি, পরে রাষ্ট্রীয় জবাবদিহি ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নে। আন্দোলন রূপ নেয় সর্বজনীন গণঅভ্যুত্থানে। পুলিশের গুলি, গ্রেপ্তার, সহিংসতা—কিছুই তাদের থামাতে পারেনি। এবার লড়াইয়ের মঞ্চ ছিল শুধু রাজপথ নয়, সামাজিক মাধ্যমও। ডিজিটাল প্রজন্ম তাদের ভাষায়, প্রযুক্তির সহায়তায় পুনরায় উচ্চারণ করেছে নূর হোসেনের সেই মূল বাণী—স্বৈরাচার যেভাবেই আসুক, তাকে প্রতিরোধ করতে হবে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্বাসনে যাওয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক বাঁক। একসময় যিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন, তিনিই গণআন্দোলনের চাপে ক্ষমতা ছাড়লেন—এ এক ইতিহাসের ব্যঙ্গাত্মক পুনরাবৃত্তি। প্রশ্ন জাগে, গণতন্ত্র কি আমরা কেবল ব্যক্তিনির্ভর রাজনীতিতে সীমিত করে ফেলেছি?
আজ উন্নয়নের দৃশ্যমান অগ্রগতি সত্ত্বেও গণতন্ত্রের গুণগত মান নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। নির্বাচন কতটা মুক্ত, বিচারব্যবস্থা কতটা নিরপেক্ষ, সংবাদমাধ্যম কতটা স্বাধীন—এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো স্পষ্ট নয়। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি যদি হয় নাগরিকের অংশগ্রহণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও আইনের শাসন, তবে আমরা এখনো সেই আদর্শ থেকে অনেক দূরে।
তবু আশার আলো নিভে যায়নি। ২০২৪ সালের আন্দোলন দেখিয়েছে, নতুন প্রজন্ম রাজনৈতিকভাবে সচেতন, তারা প্রশ্ন করতে জানে, অন্ধ আনুগত্যে বিশ্বাসী নয়। তারা বোঝে—গণতন্ত্র কেবল এক দিনের ভোট নয়, এটি প্রতিদিনের অনুশীলন ও দায়বদ্ধতা।
রাষ্ট্রযন্ত্রের ভূমিকাও এখন পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। ১৯৮৭ সালের মতো ২০২৪ সালেও পুলিশের গুলিতে তরুণেরা প্রাণ হারিয়েছে। রাষ্ট্র যখন নাগরিকের দিকে অস্ত্র তোলে, তখন গণতন্ত্রের ভিত্তিই কেঁপে ওঠে। রাষ্ট্রের শক্তি ভয় নয়, আস্থা সৃষ্টিতে—আর সেই আস্থা ফিরিয়ে আনার দায় রাষ্ট্রেরই।
নূর হোসেনের আত্মত্যাগ আজও শেখায়—গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রাম একদিনের নয়। প্রতিটি প্রজন্মকে তার জন্য নতুন করে লড়তে হয়—কখনো রাজপথে, কখনো কলমে, কখনো নীরব প্রতিবাদে।
১৯৮৭ সালের সেই স্লোগান আজও প্রাসঙ্গিক—
“স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক”
আজ, শহীদ নূর হোসেন দিবসে, আমাদের নিজেদের কাছে প্রশ্ন রাখা দরকার—আমরা কি সত্যিই সেই গণতন্ত্রের যোগ্য হয়ে উঠেছি, যার জন্য এক তরুণ বুক পেতে দিয়েছিলেন?
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
*লেখক সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংকিং আর্থিক অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং কলামিস্ট ও কবি

১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর। ঢাকার জিরো পয়েন্টে এক তরুণ নিজের বুক ও পিঠে লিখেছিলেন দুটি বাক্য—‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’ এবং ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। পুলিশের গুলিতে মুহূর্তেই তার জীবন নিভে যায়, কিন্তু সেই মৃত্যুই যেন ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়ে তোলে।
সেই তরুণ নূর হোসেন—যিনি হয়ে উঠেছিলেন প্রতিবাদের প্রতীক, এক প্রজন্মের চেতনার নাম।
তখন দেশ সামরিক শাসনের ছায়ায় আচ্ছন্ন। রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কথার আড়ালে চলছিল মতপ্রকাশের দমন, সংবাদপত্রে সেন্সর, রাজনীতিতে ভয়। এমন এক সময় নূর হোসেন নিজের শরীরকে বানিয়েছিলেন প্রতিবাদের ক্যানভাস। তার আত্মত্যাগ প্রশ্ন তুলেছিল—আমরা কি সত্যিই স্বাধীন?
নূর হোসেনের মৃত্যু শুধু এক রাজনৈতিক ঘটনার সমাপ্তি নয়; বরং এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। তার রক্তে লেখা সেই আহ্বানই পরিণতি পায় ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে। তিন দশক পর ইতিহাস যেন আবার ফিরে এসেছে নতুন প্রজন্মের মুখে, নতুন পরিপ্রেক্ষিতে।
২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে তরুণেরা আবার নেমে আসে রাজপথে। প্রথমে কোটা সংস্কারের দাবি, পরে রাষ্ট্রীয় জবাবদিহি ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নে। আন্দোলন রূপ নেয় সর্বজনীন গণঅভ্যুত্থানে। পুলিশের গুলি, গ্রেপ্তার, সহিংসতা—কিছুই তাদের থামাতে পারেনি। এবার লড়াইয়ের মঞ্চ ছিল শুধু রাজপথ নয়, সামাজিক মাধ্যমও। ডিজিটাল প্রজন্ম তাদের ভাষায়, প্রযুক্তির সহায়তায় পুনরায় উচ্চারণ করেছে নূর হোসেনের সেই মূল বাণী—স্বৈরাচার যেভাবেই আসুক, তাকে প্রতিরোধ করতে হবে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্বাসনে যাওয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক বাঁক। একসময় যিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন, তিনিই গণআন্দোলনের চাপে ক্ষমতা ছাড়লেন—এ এক ইতিহাসের ব্যঙ্গাত্মক পুনরাবৃত্তি। প্রশ্ন জাগে, গণতন্ত্র কি আমরা কেবল ব্যক্তিনির্ভর রাজনীতিতে সীমিত করে ফেলেছি?
আজ উন্নয়নের দৃশ্যমান অগ্রগতি সত্ত্বেও গণতন্ত্রের গুণগত মান নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। নির্বাচন কতটা মুক্ত, বিচারব্যবস্থা কতটা নিরপেক্ষ, সংবাদমাধ্যম কতটা স্বাধীন—এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো স্পষ্ট নয়। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি যদি হয় নাগরিকের অংশগ্রহণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও আইনের শাসন, তবে আমরা এখনো সেই আদর্শ থেকে অনেক দূরে।
তবু আশার আলো নিভে যায়নি। ২০২৪ সালের আন্দোলন দেখিয়েছে, নতুন প্রজন্ম রাজনৈতিকভাবে সচেতন, তারা প্রশ্ন করতে জানে, অন্ধ আনুগত্যে বিশ্বাসী নয়। তারা বোঝে—গণতন্ত্র কেবল এক দিনের ভোট নয়, এটি প্রতিদিনের অনুশীলন ও দায়বদ্ধতা।
রাষ্ট্রযন্ত্রের ভূমিকাও এখন পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। ১৯৮৭ সালের মতো ২০২৪ সালেও পুলিশের গুলিতে তরুণেরা প্রাণ হারিয়েছে। রাষ্ট্র যখন নাগরিকের দিকে অস্ত্র তোলে, তখন গণতন্ত্রের ভিত্তিই কেঁপে ওঠে। রাষ্ট্রের শক্তি ভয় নয়, আস্থা সৃষ্টিতে—আর সেই আস্থা ফিরিয়ে আনার দায় রাষ্ট্রেরই।
নূর হোসেনের আত্মত্যাগ আজও শেখায়—গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রাম একদিনের নয়। প্রতিটি প্রজন্মকে তার জন্য নতুন করে লড়তে হয়—কখনো রাজপথে, কখনো কলমে, কখনো নীরব প্রতিবাদে।
১৯৮৭ সালের সেই স্লোগান আজও প্রাসঙ্গিক—
“স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক”
আজ, শহীদ নূর হোসেন দিবসে, আমাদের নিজেদের কাছে প্রশ্ন রাখা দরকার—আমরা কি সত্যিই সেই গণতন্ত্রের যোগ্য হয়ে উঠেছি, যার জন্য এক তরুণ বুক পেতে দিয়েছিলেন?
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
*লেখক সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংকিং আর্থিক অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং কলামিস্ট ও কবি
আমি দেখি এক তরুণের হাত/ পতাকা ছুঁয়ে থমকে যায়/ যেন এক মুহূর্তে/ ইতিহাস তার বুকে ঢুকে পড়ে/ ধুকধুক ধুকধুক করে।
আমার আজও মনে পড়ে/ আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায় নীল অপরাজিতার কথা/ মনে পড়ে কোকিলের গেয়ে চলা উচ্চাঙ্গ সংগীতের কথা/ মনে পড়ে বানভাসি মানুষের অজস্র দুঃখের কথা,
একটি সভ্য দেশে এ ধরনের বর্বরতা কখনোই কাম্য নয় এবং কখনো এটা আশা করিনি। অস্ট্রেলিয়া একটি শান্তিপূর্ণ দেশ; এখানে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আশা করা যায় না। ধর্মীয় বিদ্বেষ ধেকে এ ধরনের বর্বরোচিত হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। এ ধরনের ঘটনা শুধু ইহুদির জন্য নয়, আমাদের সবার জন্যই উদ্বেগজনক।
বাংলাদেশেরও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিদেশের মাটিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে, যা অনেকেরই অজানা। প্রতিষ্ঠানটির নাম বাংলাদেশ স্কুল মাস্কাট। এটি ইংরেজি মাধ্যম অ্যাডেক্সসেল কারিকুলামের অধীনে পরিচালিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ওমানের রাজধানী মাস্কাটের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই স্কুল।