logo
মতামত

দেশের বিজ্ঞানি ফিজিকসে নোবেল পাবেন, আহা, কী আনন্দ!

মঞ্জুর চৌধুরী. ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Copied!
দেশের বিজ্ঞানি ফিজিকসে নোবেল পাবেন, আহা, কী আনন্দ!

মুক্ত আলোচনা

ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ফোনে ঘুম ভাঙল। ইন্টারন্যাশনাল কল। বুক ধক করে ওঠে। অসময়ে ইন্টারন্যাশনাল কল মানেই দুঃসংবাদ!

ফোন রিসিভ করলাম। ওপাশ থেকে সুইডিশ উচ্চারণে ইংলিশ শোনা গেল। মেয়েলি কন্ঠ।

—হ্যালো, মঞ্জুর চৌধুরী বলছেন?

জ্বি।

—আমি সুজানা স্মিথ, নোবেল কমিটি থেকে বলছি।

কী বেল থেকে বলছেন?

—নোবেল। ইউ নো, ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার, যা পেলে মানুষ ধন্য হয়ে যায়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অমর্ত্য সেন আর ড. ইউনুস যেটা পেয়েছেন, সেটা?

#হ্যাঁ।

শেখ হাসিনা যেটা পাননি, সেই নোবেল?

—এইতো ধরতে পেরেছ।

ফোন রাখো গাঞ্জাখোর!

ধমক দিয়ে ফোন রেখে দিলাম। নোবেল কমিটি আমার কাছে ফোন করবে কোন সুখে? নিশ্চই স্ক্যাম। বলবে, ‘তোমাকে আমরা নোবেল দেব, কিন্তু সেজন্য ফি হিসেবে ৫ হাজার ডলার অ্যাডভান্স দিতে হবে।’

আজকাল এইসব স্ক্যামারের যন্ত্রণায় অপরিচিত নম্বরের ফোন কল ধরতে ইচ্ছা করে না।

সাথে সাথে আবার ফোন বেজে উঠল। কল রিসিভ করতেই নারী কণ্ঠ বলল, ‘হ্যালো, তুমি মনে হয় বিশ্বাস করছ না। আমরা সত্যি নোবেল কমিটি থেকে ফোন করেছি। তোমার বিশেষ সাহায্য প্রয়োজন।’

কী সাহায্য? যদিও বিশ্বাস করিনি, তবু মুখ ফস্কে বেরিয়ে এল।

—তোমাদের দেশের এক বিজ্ঞানিকে খুঁজে বের করতে হবে। ফিজিকস শাখায় ওকে এ বছরের নোবেল দেওয়া হবে। ওর যুগান্তকারী আবিষ্কারকে রিকগনাইজ করে নোবেল কমিটি ধন্য হতে চায়।

মাথা চুলকে বোঝার চেষ্টা করলাম কোন বিজ্ঞানি, কী আবিষ্কার করে ফেলেছেন যে, আজকে নোবেল কমিটি তাকে খুঁজছে?

বললাম, আমি কী ভাবে তোমাদের সাহায্য করবো?

—আমরা তোমার দেশের অনেক ফেসবুক ইউজারের সাথেই যোগাযোগ করছি। এলগরিদম ব্যবহার করে তোমার নামও আমরা খুঁজে পেয়েছি। রেজাল্ট বলছে যে, তোমার নিউজফিডে একটা থিওরি খুব শেয়ার হচ্ছে। নিউটনের গ্র্যাভিটি আবিষ্কারের পর এটাই বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার। ফিজিকসের মোড় ঘুরিয়ে দেবে। আমরা সেই থিওরির আবিষ্কারককেই খুঁজছি। হয়তো তুমি আমাদের সাহায্য করতে পারবে।

আমি চুপ করে আছি দেখে ফোনে কথা বলা নারী বলল, তুমি নিউটনের লগুলো জান তো?

না, আমি সায়েন্সের স্টুডেন্ট। পরে একাউন্টিংয়ে এসেছি। ল নিয়ে পড়াশোনা করি নাই।

নারী কণ্ঠ একটু থমকে গেল। তারপর হাসতে হাসতে বলল, তোমার রসবোধ আছে। হা–হা–হা। আই লাইক ইট। এখন আমাকে বলো যে, ইলেকট্রিক চেয়ার মেটালের তৈরি হয় না, কাঠের হতে হয়। নাহলে ফ্লোরে দাঁড়ানো আশেপাশের সবাই শক খায়। এই বৈজ্ঞানিক থিওরি কে আবিষ্কার করেছে?

আমি মনে মনে বলি, খাইছে, বলে কী নারী! বললাম, তুমি নিশ্চিত এমন থিওরি কেউ আবিষ্কার করেছে?

—অবশ্যই। বাঙালিদের সোশ্যাল মিডিয়া ভরে গেছে এই থিওরিতে। এবং যারাই পোস্ট করছে, তারাই দাবি করছে অপর পক্ষ মূর্খ। ড. ইউনূসের আয়নাঘর নাটকের স্ক্রিপ্ট অতি দুর্বল এবং কোন মূর্খ সেটা লিখেছে। এই সামান্য বৈজ্ঞানিক লজিকের ব্যাপারেও যার জ্ঞান নেই! এ নিয়ে খুউব হাসি তামাশা করছে!

আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। বললাম, হোলি কাউ! বলো কী!

—অবশ্যই! একটু আগে মিস্টার স্টিভেন ওয়েইনবার্গ আমাদের অফিসে ফোন করে এই কথা বললেন। তিনি নিজেও মূর্খের ক্যাটাগরিতে পড়ে গেছেন বলে একটু মর্মাহত হয়েছেন।

আমি বললাম, উনি একা না, আমিও একই কাতারে পড়েছি। দাঁড়াও, আমি দেখি কী করতে পারি।

ফোন রেখে গভীর ভাবনায় পড়ে গেলাম। আমার এখনো মনে আছে প্রাইমারি স্কুলের বিজ্ঞান বইয়ে পড়েছি প্লাস্টিক ও কাঠের মতো সিমেন্টের ফ্লোরও বিদ্যুৎ অপরিবাহী। যদি না তাতে পানি ছড়ানো হয়, যদি না সেটা ভেজা বা স্যাতস্যাতে হয়, তাহলে তা দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে না।

ক্লাস নাইনে উঠে ফিজিকস নিলাম, সেই বইয়েও একই কথাই লেখা ছিল। আরেকটু ডিটেইলে। সিমেন্ট সাধারণত একটি ‘অপরিবাহী’ (ইনসুলেটর) পদার্থ। এর মানে হলো এটি বিদ্যুতের প্রবাহকে সহজে অনুমতি দেয় না। সিমেন্টের গঠনগত বৈশিষ্ট্য এবং এর মধ্যে বিদ্যমান উপাদানগুলো বিদ্যুতের প্রবাহকে বাধা দেয়।

এইচএসসির ফিজিকসেও দেখি একই কথা লেখা ছিল। ইউনিভার্সিটিতে উঠে ফিজিক্স নিয়েছি, সেই বইয়েও লেখা যে সিমেন্টে প্রধানত সিলিকেট ও অন্য খনিজ পদার্থ থাকে, যা বিদ্যুতের জন্য উচ্চ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়াও, সিমেন্ট শুষ্ক অবস্থায় থাকলে এর বিদ্যুৎ পরিবাহিতা আরও কমে যায়। তবে, সিমেন্ট যদি ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে হয়, তাহলে এর মধ্যে বিদ্যুৎ কিছুটা প্রবাহিত হতে পারে, কারণ জল বিদ্যুতের একটি ভালো পরিবাহী। কিন্তু সাধারণভাবে শুষ্ক সিমেন্টের ফ্লোর বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে দেয় না।

এই বৈশিষ্ট্যের কারণে সিমেন্টকে বিল্ডিং নির্মাণে নিরাপদ ও উপযুক্ত পদার্থ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

তা বাংলাদেশের বিজ্ঞানি এমন বিদ্যুৎ আবিষ্কার করে ফেলেছে যা লোহার চেয়ার থেকে সিমেন্টের শুকনো ফ্লোর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আশেপাশের সবাইকেই ঝাকানাকা শক দেয়? কে এই মহান বিজ্ঞানি? এই কারণেই তাকে নোবেল কমিটি খুঁজছে!

আমার জীবনের যাবতীয় পড়াশোনা মিথ্যা প্রমাণিত হলো? বাপ্পারাজের মতো বলতে ইচ্ছা করছে, ‘এ আমি বিশ্বাস করি নাআআআআআ!

আবার অন্যদিকে খুশিও লাগছে। দেশের বিজ্ঞানি ফিজিক্সে নোবেল পাবে, আ, কী আনন্দ!

তা আপনারা যদি সেই বিজ্ঞানির নাম ঠিকানা একটু জানাতেন, আমার বিশেষ উপকার হতো। ভদ্রমহিলা এখনো ফোন ধরে আছেন। ইন্টারন্যাশনাল কলে বিল উঠছে।

**প্রিয় পাঠক, বিডিজেন২৪-এ গল্প, কবিতা, ভ্রমণকাহিনি, সুখ–দুঃখের স্মৃতি, প্রবন্ধ, ফিচার, অনুষ্ঠান বা ঘটনার ভিডিও এবং ছবিসহ নানা বিষয়ের লেখা পাঠান। মেইল: [email protected]

আরও পড়ুন

নতুন অতিথি এবং একটা সুন্দর পৃথিবীর আশায়

নতুন অতিথি এবং একটা সুন্দর পৃথিবীর আশায়

এই মানবিকতা আমেরিকানদের জন‍্য নতুন নয়। ক‍্যালিফোর্নিয়াতে নিজেকে কখনো ইমিগ্র‍্যান্ট মনে হয়নি নিজেকে। মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। হাত বাড়িয়ে দেয় সাহায‍্যে।

৫ দিন আগে

বাংলাদেশ, আমার প্রিয় জন্মভূমি

বাংলাদেশ, আমার প্রিয় জন্মভূমি

আমেরিকায় আসার আমার ২৫ বছর পূর্ণ হলো। সময়ের হিসাবে এটি অনেক লম্বা একটা সময়। প্রথম প্রথম এখানে এসে অনেক লাভ–লোকসানের হিসাব করতাম। একটা পর্যায়ে দেশে ফেরত যাবারও ইচ্ছা করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তাই জীবনকে এখানে অন্যভাবে সাজিয়ে নিয়েছি।

২২ মে ২০২৫

একাকিত্ব

একাকিত্ব

একাকিত্ব একটি জটিল ও বহুমাত্রিক মানসিক সমস্যা। এটি মানুষের মনোজগতে গভীর প্রভাব ফেলে। এটি শুধুমাত্র শারীরিক বিচ্ছিন্নতা বা একা থাকার অনুভূতি নয়, বরং মানসিক ও আবেগিক বিচ্ছিন্নতার অনুভূতিও তৈরি করে। তবে একাকিত্বকে শুধু নেতিবাচক হিসেবে দেখার কোনো কারণ নেই।

২১ মে ২০২৫

এমন একটা মা দে না

এমন একটা মা দে না

বিশ্ব মা দিবসের প্রাক্কালে পুলিশ অফিসার পলাশ চলে গেলেন। মা একটা অপরূপ শব্দ, একটা অনন‍্য সম্পর্ক যেটা পৃথিবীর সুন্দরতম সম্পর্কের একটা। নিজের জীবন বাজি রেখে মা সন্তানের জন্ম দেন, তিল তিল করে বড় করে তোলেন।

১১ মে ২০২৫