সহিদুল আলম স্বপন, জেনেভা, সুইজারল্যান্ড
ভ্রমণকাহিনি
বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে, সুইজারল্যান্ডের শান্ত শহর জেনেভায় ২০ বছর পর আবার এসেছেন ছোট গিন্নি নাদিয়া। সঙ্গে আছেন তার প্রাণের মানুষ সাধন, আর তাদের দুটো ছোট্ট খুশির ফুল—ছেলে আনাস আর ৮ বছরের মেয়ে আলিজা। যার ইচরেপাকা স্বভাবের জন্য আমি তাকে খালাম্মা সম্বোধন করি। আমার মুখ ফোলানো অর্ধাঙ্গিনী তানিয়া আর মেয়ে জারার জানের জান সবাই, সেই সাথে আমারও। সুইজারল্যান্ডে থাকবেন সপ্তাহ দুয়েক।
প্রতি দিনের জীবনের ব্যস্ততা আর বাস্তবতা সামলিয়ে একদিন হঠাৎই মনে হলো—‘এই জীবনটাকে একটু ছুঁয়ে দেখা যাক, একটু রঙিন করে তোলা যাক।’
গন্তব্য: প্যারিস, ফ্রান্স
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো, ১৪ জুলাই ফ্রান্সের জাতীয় দিবসে প্যারিসে কাটানো হবে। প্যারিস মানেই তো রোমান্স, ইতিহাস আর বিস্ময়ের শহর! সেই সঙ্গে Bastille Day-এর উদ্যাপন, আতশবাজি আর সাংস্কৃতিক আনন্দের বিশাল এক অভিজ্ঞতা।
টিজিভিতে জেনেভা থেকে যাত্রা
ভোরবেলা ব্যাগপত্র গুছিয়ে জেনেভা গার করনোভা (রেল স্টেশন) থেকে সবাই মিলে উঠে বসলাম ফ্রান্সের বিখ্যাত উচ্চগতির ট্রেন টিজিভিতে (TGV)। ট্রেন ছুটছে ৩০০ থেকে ৩২০ কিলোমিটার বেগে, জানালা দিয়ে পাহাড়, লেক আর দূরের গ্রামের বাড়িগুলো যেন একটার পর একটা ছবি হয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আনাস জানালা ধরে উচ্ছ্বাসে বলছে, ‘আমরা কি উড়ছি?’ আর ছোট্ট আলিজা বাবার কোলে বসে কৌতূহলভরা চোখে ট্রেনের প্রতিটি মোড় দেখে হাসছে।
প্যারিসে পা রাখা
ঘণ্টা তিনেক পর ট্রেন যখন প্যারিসে পৌঁছাল, তখন সূর্য মামা আকাশের বুকে লুকোচুরি খেলছে। কিন্তু একি! ব্যাথাতুর আকাশের বুকে একের পর ফ্রান্স বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান রংবেরঙের দুত্যি ছড়িয়ে কসরত দেখাচ্ছে মুগ্ধ আমরা সবাই।
স্টেশনে নামতেই ভিড়, শব্দ, আর শহরের স্পন্দন যেন সঙ্গে সঙ্গে তাদের হৃদয় ছুঁয়ে গেল। হোটেল পৌঁছে একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেলের দিকে বেরিয়ে পড়লাম আইফেল টাওয়ার দেখতে।
সেই মুহূর্তে, আলিজা বিস্ময়ে বলল, ‘এইটাই কি মায়ের গল্পের টাওয়ার?’
আর নাদিয়া চোখ বন্ধ করে কিছু সময় তাকিয়ে রইলেন, যেন সেই গল্প আজ সত্যি হয়ে গেল।
ফরাসি খাবার, হালকা হাঁটাচলা
পরদিন সকালে ছোট্ট একটা কাফেতে কফি আর পেস্ট্রি খেতে খেতে শহরের গলিতে হেঁটে বেরিয়ে পড়লাম। আনাস এক ফরাসি ক্রোয়াসাঁ খেয়ে বলল, ‘এটা কি পরোটার ভাই?’ সবাই হেসে উঠল।
স্মৃতির খাতায় প্যারিস
ট্রেন যাত্রা, আইফেল টাওয়ার, Bastille Day, ছোট ছোট হাসি, শিশুর চোখে প্রথম প্যারিস দেখা—সব মিলিয়ে যেন এই ভ্রমণ ছিল এক পরিবারের জন্য সারা জীবনের সঞ্চয়।
প্যারিসের রাস্তায় শেষ বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে নাদিয়া বললেন, ‘জীবনে কত না দুঃখ কষ্ট আসে, কিন্তু এই কয়েকটা দিনের আনন্দ সারা জীবনের শক্তি হয়ে থাকবে।’
এই ছিল ছোট গিন্নি নাদিয়া ও তাঁর পরিবারের এক টুকরো প্যারিস ভ্রমণ—ভালোবাসা, ঐতিহ্য আর নতুন অভিজ্ঞতার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ।
১৪ জুলাইয়ের রাত, Bastille Day–র উদ্যাপন
রাতটা ছিল যেন স্বপ্নের মতো। Champ de Mars-এ হাজার হাজার মানুষের মাঝে বসে আতশবাজির অপেক্ষা। আকাশ কালো হয়ে আসতেই শুরু হলো রঙের ঝলকানি। লাল, নীল, সোনালি—আতশবাজি যেন পুরো প্যারিস শহরটাকে আলোয় রাঙিয়ে তুলল। আনাস হাততালি দিয়ে বলছে, ‘এটা তো সুপারহিরোর সিনেমার মতো।’
নাদিয়া চুপচাপ সাধনের হাত ধরলেন। এই মুহূর্ত—এই আলো, এই হাসি, এই পরিবারের বন্ধন—সব মিলিয়ে যেন ছিল নিখাদ ভালোবাসার এক চিত্রপট। আর আমার মুখ ফোলানো অর্ধাঙ্গিনী তানিয়া আমার কাঁধে মাথা রেখে জানান দিচ্ছেন তাঁর সারাদিনের ক্লান্তির কথা।
১৪ জুলাই বিশ্ব ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। ১৭৮৯ সালের এই দিনটিতে ফ্রান্সে ঘটে এক যুগান্তকারী ঘটনা: বাস্তিল দুর্গ দখল। এটিই ছিল ফরাসি বিপ্লবের সূচনা বিন্দু। সেই মুহূর্ত থেকেই ইউরোপসহ পুরো বিশ্বে রাজতান্ত্রিক শোষণব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। এই বিপ্লব শুধু ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের পতন ঘটায়নি, বরং ব্যক্তিস্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সাম্যবাদ ও মানবাধিকারের মতো ধারণাগুলোর শিকড় ছড়িয়ে দেয় বিশ্বের চারদিকেই।
ফরাসি বিপ্লবের এই দিনটিকে ‘বাস্তিল দিবস’ বা ফ্রান্সের জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তবে এর তাৎপর্য কেবল অতীত ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি আজকের পৃথিবীতেও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
বাস্তিল দুর্গ: শোষণের প্রতীক থেকে স্বাধীনতার সংকেত
বাস্তিল দুর্গ ছিল ফরাসি রাজতন্ত্রের এক ভয়ংকর প্রতীক। এটি ছিল এক ধরনের রাজনৈতিক কারাগার, যেখানে প্রায়শই রাজা ও অভিজাত শ্রেণি নিজেদের বিরোধীদের আটক করে রাখত—কোনো বিচার ছাড়াই। জনগণের দৃষ্টিতে এটি ছিল অন্যায় ও দমন-পীড়নের একটি প্রতীক।
১৪ জুলাই ১৭৮৯ সালে যখন ক্ষুব্ধ জনগণ বাস্তিল দুর্গে আক্রমণ চালায়, তখন সেখানে মাত্র ৭ জন বন্দি ছিল। কিন্তু ঘটনাটির প্রতীকী ও রাজনৈতিক তাৎপর্য ছিল অসীম। এটি ছিল এক অবিস্মরণীয় ঘূর্ণিঝড়, যা প্রাচীন শাসনব্যবস্থার ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেয়।
বিপ্লবের মূল কারণগুলো: ক্ষুধা, বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে জাগরণ
ফরাসি বিপ্লবের পেছনে বহু গভীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ ছিল। ফ্রান্সের তৎকালীন সমাজ কাঠামো ছিল ‘ত্রয়ী শ্রেণিতে’ বিভক্ত। কুলীন ধর্মযাজক, অভিজাত সামন্ত এবং বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ। প্রথম দুই শ্রেণি কর ও আর্থিক দায়মুক্তির সুবিধা ভোগ করত, আর সাধারণ জনগণ বহন করত দেশের সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক চাপ।
খাদ্য সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দুর্ভিক্ষ এবং রাজপরিবারের অপচয় জনগণের অসন্তোষকে তীব্র করে তোলে। কৃষক, শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বুঝতে শুরু করে যে এই শোষণমূলক ব্যবস্থা পরিবর্তন না হলে বাঁচার পথ নেই।
‘স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব’—বিপ্লবের চিরকালীন চেতনা
Liberté, Égalité, Fraternité—এই ৩টি শব্দই হয়ে ওঠে বিপ্লবের চালিকাশক্তি।
*স্বাধীনতা (Liberty): বাকস্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, ধর্মের স্বাধীনতা—এসব ধারণা বিপ্লবের মাধ্যমে সামনে আসে।
*সাম্য (Equality): জন্ম বা পেশা অনুযায়ী নয়, আইনের দৃষ্টিতে সব মানুষ সমান—এই ধারণাটি বিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়।
*ভ্রাতৃত্ব (Fraternity): সামাজিক সংহতি ও সহযোগিতার চেতনা—একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর নৈতিক দায়িত্ব।
এই মূল্যবোধগুলোর জন্ম হলেও ফ্রান্সে, তার ঢেউ এসে পৌঁছায় ভারত, আমেরিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, এমনকি আফ্রিকার ঔপনিবেশিক ভূখণ্ডগুলোতেও।
বিপ্লব পরবর্তী পৃথিবী: রক্তের মধ্যে দিয়ে জন্ম নতুন চেতনার
বিপ্লবের পর ষোড়শ লুই ও রানী মারি আন্তোয়ানেতকে গিলোটিনে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়, প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম প্রজাতন্ত্র। পরে উঠে আসেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, যিনি সাময়িকভাবে একনায়কতন্ত্রে রূপ দেন বিপ্লবের অর্জনকে। কিন্তু ইতিহাসের চাকা আর পিছিয়ে যায়নি।
ফরাসি বিপ্লব বিভিন্ন দেশের সংবিধান ও রাজনৈতিক দর্শনে গভীর ছাপ ফেলে। মানবাধিকার ঘোষণা (Declaration of the Rights of Man and of the Citizen) বিপ্লবের এক অনন্য অর্জন—যেখানে বলা হয়, ‘সব মানুষ স্বাধীন ও সমান মর্যাদা নিয়ে জন্মায়।’ এটি আজকের জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত।
বর্তমান বিশ্বে ফরাসি বিপ্লবের প্রাসঙ্গিকতা
আজকের পৃথিবী অনেকটাই প্রযুক্তিনির্ভর ও বৈশ্বিক হলেও শোষণ, বৈষম্য ও মত প্রকাশের দমন-পীড়ন এখনো বিরাজমান। বিভিন্ন দেশে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, সেনাশাসন, বাক্স্বাধীনতার অবরোধ এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য মানুষের স্বাধীন জীবনযাপনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
ফরাসি বিপ্লব আমাদের কী শেখায়?
গণতন্ত্রের শক্তি: ক্ষমতার উৎস জনগণ—এই ধারণা এখনো বিশ্বের বহু দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফরাসি বিপ্লব দেখিয়েছে, শোষণের বিরুদ্ধে সংগঠিত জনগণই পারে শাসকের ভাগ্য নির্ধারণ করতে।
সাম্যের প্রয়োজনীয়তা: ধনী-গরিবের ব্যবধান দিনে দিনে বাড়ছে। করোনাকালে এই বৈষম্য আরও প্রকট হয়েছে। ফরাসি বিপ্লবের সাম্যের চেতনা আজকের বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও প্রাসঙ্গিক।
মানবাধিকারের গুরুত্ব: ২১শ শতকেও সাংবাদিক হত্যা, রাজনৈতিক বন্দীত্ব, ধর্মীয় নিপীড়ন, ও গৃহযুদ্ধ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, বিপ্লবের চেতনা এখনো অপূর্ণ রয়ে গেছে।
নারী অধিকার: ফরাসি বিপ্লবের সময় ওলিম্প দ্য গুজ নারীদের জন্য ‘নারী ও নারী নাগরিকদের অধিকারের ঘোষণা’ প্রকাশ করেছিলেন। আজও বিশ্বের বহু দেশে নারীরা পুরুষের সমান অধিকার থেকে বঞ্চিত। এই চেতনাও এখনো আমাদের প্রেরণা দেয়।
১৪ জুলাই উদযাপন ও স্মরণ
ফ্রান্সে ১৪ জুলাই ‘লা ফেত নাসিওনাল’ বা জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয়। প্রতি বছর এই দিনে রাজধানী প্যারিসের শঁজেলিজে (Champs-Élysées) সড়কে হয় বর্ণাঢ্য সামরিক কুচকাওয়াজ। রাতের আকাশ আলোকিত হয় আতশবাজির রঙিন উৎসবে। দেশের মানুষ আনন্দে মেতে উঠে, সংগীত, নৃত্য ও আলো-আধারির উৎসবের মধ্য দিয়ে। রাত ১১টায় শুরু হয় আতশবাজির উৎসব আইফেল টাওয়ারে, ঘন্টাব্যপি চলে রংবেরঙের চোখ ধাঁধানো আলো আঁধারির খেলা।
তবে উদ্যাপনের মধ্যেও থাকে এক গভীর বোধ—নিজেদের অতীত সংগ্রামের ইতিহাসকে স্মরণ করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সেই আদর্শে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি।
ইতিহাসের আলোকবর্তিকা
ফরাসি বিপ্লব কোনো নিছক অতীত নয়—এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আজও যখন পৃথিবীর কোথাও একজন নিরীহ মানুষ রাষ্ট্রের অন্যায়ে আক্রান্ত হয়, যখন কোথাও কেউ মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দেয়, তখন সেই আওয়াজে প্রতিধ্বনিত হয় ১৭৮৯ সালের প্যারিসের রাস্তায় উচ্চারিত সেই ঐতিহাসিক দাবি—‘স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব!’
১৪ জুলাই আমাদের মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতা পাওয়া যায় না বিনা চেষ্টায়, বিনা আত্মত্যাগে। ফরাসি বিপ্লব এই শিক্ষা দেয় যে ইতিহাস গড়ে ওঠে জনগণের ইচ্ছার শক্তিতে। যখন সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর জেগে ওঠে, তখন কোনো শাসক, কোনো শোষণ, কোনো দেয়াল টিকে থাকতে পারে না। ৭৯১০ দূরে থেকেও আমি শুনতে পাই বাংলাদেশের ‘জুলাই বিপ্লব’–এর পদধ্বনি।
ভ্রমণকাহিনি
বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে, সুইজারল্যান্ডের শান্ত শহর জেনেভায় ২০ বছর পর আবার এসেছেন ছোট গিন্নি নাদিয়া। সঙ্গে আছেন তার প্রাণের মানুষ সাধন, আর তাদের দুটো ছোট্ট খুশির ফুল—ছেলে আনাস আর ৮ বছরের মেয়ে আলিজা। যার ইচরেপাকা স্বভাবের জন্য আমি তাকে খালাম্মা সম্বোধন করি। আমার মুখ ফোলানো অর্ধাঙ্গিনী তানিয়া আর মেয়ে জারার জানের জান সবাই, সেই সাথে আমারও। সুইজারল্যান্ডে থাকবেন সপ্তাহ দুয়েক।
প্রতি দিনের জীবনের ব্যস্ততা আর বাস্তবতা সামলিয়ে একদিন হঠাৎই মনে হলো—‘এই জীবনটাকে একটু ছুঁয়ে দেখা যাক, একটু রঙিন করে তোলা যাক।’
গন্তব্য: প্যারিস, ফ্রান্স
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো, ১৪ জুলাই ফ্রান্সের জাতীয় দিবসে প্যারিসে কাটানো হবে। প্যারিস মানেই তো রোমান্স, ইতিহাস আর বিস্ময়ের শহর! সেই সঙ্গে Bastille Day-এর উদ্যাপন, আতশবাজি আর সাংস্কৃতিক আনন্দের বিশাল এক অভিজ্ঞতা।
টিজিভিতে জেনেভা থেকে যাত্রা
ভোরবেলা ব্যাগপত্র গুছিয়ে জেনেভা গার করনোভা (রেল স্টেশন) থেকে সবাই মিলে উঠে বসলাম ফ্রান্সের বিখ্যাত উচ্চগতির ট্রেন টিজিভিতে (TGV)। ট্রেন ছুটছে ৩০০ থেকে ৩২০ কিলোমিটার বেগে, জানালা দিয়ে পাহাড়, লেক আর দূরের গ্রামের বাড়িগুলো যেন একটার পর একটা ছবি হয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আনাস জানালা ধরে উচ্ছ্বাসে বলছে, ‘আমরা কি উড়ছি?’ আর ছোট্ট আলিজা বাবার কোলে বসে কৌতূহলভরা চোখে ট্রেনের প্রতিটি মোড় দেখে হাসছে।
প্যারিসে পা রাখা
ঘণ্টা তিনেক পর ট্রেন যখন প্যারিসে পৌঁছাল, তখন সূর্য মামা আকাশের বুকে লুকোচুরি খেলছে। কিন্তু একি! ব্যাথাতুর আকাশের বুকে একের পর ফ্রান্স বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান রংবেরঙের দুত্যি ছড়িয়ে কসরত দেখাচ্ছে মুগ্ধ আমরা সবাই।
স্টেশনে নামতেই ভিড়, শব্দ, আর শহরের স্পন্দন যেন সঙ্গে সঙ্গে তাদের হৃদয় ছুঁয়ে গেল। হোটেল পৌঁছে একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেলের দিকে বেরিয়ে পড়লাম আইফেল টাওয়ার দেখতে।
সেই মুহূর্তে, আলিজা বিস্ময়ে বলল, ‘এইটাই কি মায়ের গল্পের টাওয়ার?’
আর নাদিয়া চোখ বন্ধ করে কিছু সময় তাকিয়ে রইলেন, যেন সেই গল্প আজ সত্যি হয়ে গেল।
ফরাসি খাবার, হালকা হাঁটাচলা
পরদিন সকালে ছোট্ট একটা কাফেতে কফি আর পেস্ট্রি খেতে খেতে শহরের গলিতে হেঁটে বেরিয়ে পড়লাম। আনাস এক ফরাসি ক্রোয়াসাঁ খেয়ে বলল, ‘এটা কি পরোটার ভাই?’ সবাই হেসে উঠল।
স্মৃতির খাতায় প্যারিস
ট্রেন যাত্রা, আইফেল টাওয়ার, Bastille Day, ছোট ছোট হাসি, শিশুর চোখে প্রথম প্যারিস দেখা—সব মিলিয়ে যেন এই ভ্রমণ ছিল এক পরিবারের জন্য সারা জীবনের সঞ্চয়।
প্যারিসের রাস্তায় শেষ বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে নাদিয়া বললেন, ‘জীবনে কত না দুঃখ কষ্ট আসে, কিন্তু এই কয়েকটা দিনের আনন্দ সারা জীবনের শক্তি হয়ে থাকবে।’
এই ছিল ছোট গিন্নি নাদিয়া ও তাঁর পরিবারের এক টুকরো প্যারিস ভ্রমণ—ভালোবাসা, ঐতিহ্য আর নতুন অভিজ্ঞতার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ।
১৪ জুলাইয়ের রাত, Bastille Day–র উদ্যাপন
রাতটা ছিল যেন স্বপ্নের মতো। Champ de Mars-এ হাজার হাজার মানুষের মাঝে বসে আতশবাজির অপেক্ষা। আকাশ কালো হয়ে আসতেই শুরু হলো রঙের ঝলকানি। লাল, নীল, সোনালি—আতশবাজি যেন পুরো প্যারিস শহরটাকে আলোয় রাঙিয়ে তুলল। আনাস হাততালি দিয়ে বলছে, ‘এটা তো সুপারহিরোর সিনেমার মতো।’
নাদিয়া চুপচাপ সাধনের হাত ধরলেন। এই মুহূর্ত—এই আলো, এই হাসি, এই পরিবারের বন্ধন—সব মিলিয়ে যেন ছিল নিখাদ ভালোবাসার এক চিত্রপট। আর আমার মুখ ফোলানো অর্ধাঙ্গিনী তানিয়া আমার কাঁধে মাথা রেখে জানান দিচ্ছেন তাঁর সারাদিনের ক্লান্তির কথা।
১৪ জুলাই বিশ্ব ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। ১৭৮৯ সালের এই দিনটিতে ফ্রান্সে ঘটে এক যুগান্তকারী ঘটনা: বাস্তিল দুর্গ দখল। এটিই ছিল ফরাসি বিপ্লবের সূচনা বিন্দু। সেই মুহূর্ত থেকেই ইউরোপসহ পুরো বিশ্বে রাজতান্ত্রিক শোষণব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। এই বিপ্লব শুধু ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের পতন ঘটায়নি, বরং ব্যক্তিস্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সাম্যবাদ ও মানবাধিকারের মতো ধারণাগুলোর শিকড় ছড়িয়ে দেয় বিশ্বের চারদিকেই।
ফরাসি বিপ্লবের এই দিনটিকে ‘বাস্তিল দিবস’ বা ফ্রান্সের জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তবে এর তাৎপর্য কেবল অতীত ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি আজকের পৃথিবীতেও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
বাস্তিল দুর্গ: শোষণের প্রতীক থেকে স্বাধীনতার সংকেত
বাস্তিল দুর্গ ছিল ফরাসি রাজতন্ত্রের এক ভয়ংকর প্রতীক। এটি ছিল এক ধরনের রাজনৈতিক কারাগার, যেখানে প্রায়শই রাজা ও অভিজাত শ্রেণি নিজেদের বিরোধীদের আটক করে রাখত—কোনো বিচার ছাড়াই। জনগণের দৃষ্টিতে এটি ছিল অন্যায় ও দমন-পীড়নের একটি প্রতীক।
১৪ জুলাই ১৭৮৯ সালে যখন ক্ষুব্ধ জনগণ বাস্তিল দুর্গে আক্রমণ চালায়, তখন সেখানে মাত্র ৭ জন বন্দি ছিল। কিন্তু ঘটনাটির প্রতীকী ও রাজনৈতিক তাৎপর্য ছিল অসীম। এটি ছিল এক অবিস্মরণীয় ঘূর্ণিঝড়, যা প্রাচীন শাসনব্যবস্থার ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেয়।
বিপ্লবের মূল কারণগুলো: ক্ষুধা, বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে জাগরণ
ফরাসি বিপ্লবের পেছনে বহু গভীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ ছিল। ফ্রান্সের তৎকালীন সমাজ কাঠামো ছিল ‘ত্রয়ী শ্রেণিতে’ বিভক্ত। কুলীন ধর্মযাজক, অভিজাত সামন্ত এবং বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ। প্রথম দুই শ্রেণি কর ও আর্থিক দায়মুক্তির সুবিধা ভোগ করত, আর সাধারণ জনগণ বহন করত দেশের সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক চাপ।
খাদ্য সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দুর্ভিক্ষ এবং রাজপরিবারের অপচয় জনগণের অসন্তোষকে তীব্র করে তোলে। কৃষক, শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বুঝতে শুরু করে যে এই শোষণমূলক ব্যবস্থা পরিবর্তন না হলে বাঁচার পথ নেই।
‘স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব’—বিপ্লবের চিরকালীন চেতনা
Liberté, Égalité, Fraternité—এই ৩টি শব্দই হয়ে ওঠে বিপ্লবের চালিকাশক্তি।
*স্বাধীনতা (Liberty): বাকস্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, ধর্মের স্বাধীনতা—এসব ধারণা বিপ্লবের মাধ্যমে সামনে আসে।
*সাম্য (Equality): জন্ম বা পেশা অনুযায়ী নয়, আইনের দৃষ্টিতে সব মানুষ সমান—এই ধারণাটি বিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়।
*ভ্রাতৃত্ব (Fraternity): সামাজিক সংহতি ও সহযোগিতার চেতনা—একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর নৈতিক দায়িত্ব।
এই মূল্যবোধগুলোর জন্ম হলেও ফ্রান্সে, তার ঢেউ এসে পৌঁছায় ভারত, আমেরিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, এমনকি আফ্রিকার ঔপনিবেশিক ভূখণ্ডগুলোতেও।
বিপ্লব পরবর্তী পৃথিবী: রক্তের মধ্যে দিয়ে জন্ম নতুন চেতনার
বিপ্লবের পর ষোড়শ লুই ও রানী মারি আন্তোয়ানেতকে গিলোটিনে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়, প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম প্রজাতন্ত্র। পরে উঠে আসেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, যিনি সাময়িকভাবে একনায়কতন্ত্রে রূপ দেন বিপ্লবের অর্জনকে। কিন্তু ইতিহাসের চাকা আর পিছিয়ে যায়নি।
ফরাসি বিপ্লব বিভিন্ন দেশের সংবিধান ও রাজনৈতিক দর্শনে গভীর ছাপ ফেলে। মানবাধিকার ঘোষণা (Declaration of the Rights of Man and of the Citizen) বিপ্লবের এক অনন্য অর্জন—যেখানে বলা হয়, ‘সব মানুষ স্বাধীন ও সমান মর্যাদা নিয়ে জন্মায়।’ এটি আজকের জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত।
বর্তমান বিশ্বে ফরাসি বিপ্লবের প্রাসঙ্গিকতা
আজকের পৃথিবী অনেকটাই প্রযুক্তিনির্ভর ও বৈশ্বিক হলেও শোষণ, বৈষম্য ও মত প্রকাশের দমন-পীড়ন এখনো বিরাজমান। বিভিন্ন দেশে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, সেনাশাসন, বাক্স্বাধীনতার অবরোধ এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য মানুষের স্বাধীন জীবনযাপনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
ফরাসি বিপ্লব আমাদের কী শেখায়?
গণতন্ত্রের শক্তি: ক্ষমতার উৎস জনগণ—এই ধারণা এখনো বিশ্বের বহু দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফরাসি বিপ্লব দেখিয়েছে, শোষণের বিরুদ্ধে সংগঠিত জনগণই পারে শাসকের ভাগ্য নির্ধারণ করতে।
সাম্যের প্রয়োজনীয়তা: ধনী-গরিবের ব্যবধান দিনে দিনে বাড়ছে। করোনাকালে এই বৈষম্য আরও প্রকট হয়েছে। ফরাসি বিপ্লবের সাম্যের চেতনা আজকের বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও প্রাসঙ্গিক।
মানবাধিকারের গুরুত্ব: ২১শ শতকেও সাংবাদিক হত্যা, রাজনৈতিক বন্দীত্ব, ধর্মীয় নিপীড়ন, ও গৃহযুদ্ধ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, বিপ্লবের চেতনা এখনো অপূর্ণ রয়ে গেছে।
নারী অধিকার: ফরাসি বিপ্লবের সময় ওলিম্প দ্য গুজ নারীদের জন্য ‘নারী ও নারী নাগরিকদের অধিকারের ঘোষণা’ প্রকাশ করেছিলেন। আজও বিশ্বের বহু দেশে নারীরা পুরুষের সমান অধিকার থেকে বঞ্চিত। এই চেতনাও এখনো আমাদের প্রেরণা দেয়।
১৪ জুলাই উদযাপন ও স্মরণ
ফ্রান্সে ১৪ জুলাই ‘লা ফেত নাসিওনাল’ বা জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয়। প্রতি বছর এই দিনে রাজধানী প্যারিসের শঁজেলিজে (Champs-Élysées) সড়কে হয় বর্ণাঢ্য সামরিক কুচকাওয়াজ। রাতের আকাশ আলোকিত হয় আতশবাজির রঙিন উৎসবে। দেশের মানুষ আনন্দে মেতে উঠে, সংগীত, নৃত্য ও আলো-আধারির উৎসবের মধ্য দিয়ে। রাত ১১টায় শুরু হয় আতশবাজির উৎসব আইফেল টাওয়ারে, ঘন্টাব্যপি চলে রংবেরঙের চোখ ধাঁধানো আলো আঁধারির খেলা।
তবে উদ্যাপনের মধ্যেও থাকে এক গভীর বোধ—নিজেদের অতীত সংগ্রামের ইতিহাসকে স্মরণ করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সেই আদর্শে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি।
ইতিহাসের আলোকবর্তিকা
ফরাসি বিপ্লব কোনো নিছক অতীত নয়—এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আজও যখন পৃথিবীর কোথাও একজন নিরীহ মানুষ রাষ্ট্রের অন্যায়ে আক্রান্ত হয়, যখন কোথাও কেউ মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দেয়, তখন সেই আওয়াজে প্রতিধ্বনিত হয় ১৭৮৯ সালের প্যারিসের রাস্তায় উচ্চারিত সেই ঐতিহাসিক দাবি—‘স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব!’
১৪ জুলাই আমাদের মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতা পাওয়া যায় না বিনা চেষ্টায়, বিনা আত্মত্যাগে। ফরাসি বিপ্লব এই শিক্ষা দেয় যে ইতিহাস গড়ে ওঠে জনগণের ইচ্ছার শক্তিতে। যখন সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর জেগে ওঠে, তখন কোনো শাসক, কোনো শোষণ, কোনো দেয়াল টিকে থাকতে পারে না। ৭৯১০ দূরে থেকেও আমি শুনতে পাই বাংলাদেশের ‘জুলাই বিপ্লব’–এর পদধ্বনি।
একটা দেশের অর্থনীতিতে আর্থিক খাতের ভূমিকা কী, তা মনে হয় বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। আর্থিক খাতের প্রধান অঙ্গগুলো হলো—ব্যাংক, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শেয়ার বাজার।
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এক অদ্ভুত ত্রিভুজ—আওয়ামী লীগ, বিএনপি আর জামায়াত। কখনো সরাসরি, কখনো মুখোমুখি সংঘাত, কখনো আঁতাত—এই ত্রিভুজই ছিল ক্ষমতার মূল অঙ্ক।
শুধু পেশাগত দক্ষতা যথেষ্ট নয়; বিদেশের সংস্কৃতি, ভাষা ও সামাজিক রীতিনীতি সম্পর্কে ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। একটি নতুন দেশে কাজ করতে গেলে কেবল যান্ত্রিক দক্ষতা দিয়ে কাজ চালানো কঠিন হতে পারে। বরং ভাষার দক্ষতা, মানবিক আচরণ ও সামাজিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ক্ষমতা কর্মীদের জীবনকে ফলপ্রসূ করে তুলতে পারে।
লং টার্ম সম্পর্কের জন্য মোলায়েম কথা খুব উপকারি। ব্যক্তিগত মানুষটি যদি কারণে/অকারণে প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে ওঠে সেই সম্পর্কে আর যাই থাকুক আনুগত্য থাকে না। সম্পর্ক হতে হবে মুক্ত জানালার মতো। যত দূর চোখ যায় শুধু তাকিয়ে থাকা। তাকে ভাবলেই যদি ক্লান্তি আসে সেটা কোনোভাবেই সম্পর্ক হতে পারে না।
শুধু পেশাগত দক্ষতা যথেষ্ট নয়; বিদেশের সংস্কৃতি, ভাষা ও সামাজিক রীতিনীতি সম্পর্কে ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। একটি নতুন দেশে কাজ করতে গেলে কেবল যান্ত্রিক দক্ষতা দিয়ে কাজ চালানো কঠিন হতে পারে। বরং ভাষার দক্ষতা, মানবিক আচরণ ও সামাজিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ক্ষমতা কর্মীদের জীবনকে ফলপ্রসূ করে তুলতে পারে।
৮ দিন আগে