
সৈয়দ ইজাজ আহসান

সোশ্যাল মিডিয়া আজ আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ছেলে-বুড়ো প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে এর প্রতি আসক্ত। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলে ইউটিউবারদের মধ্যে ভিউ, লাইক ও শেয়ার বাড়ানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়। সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে নানা তথ্য সমেত কন্টেন্টের বন্যা বইতে থাকে। এসবের মধ্যে অনেক কথাই থাকে অন্তঃসারশূন্য, আবার অনেকগুলোর উদ্দেশ্যও থাকে মতলবি—নিজেকে বা নিজের দলকে মহান হিসেবে তুলে ধরা।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ার একটি আলোচনা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। একজন বর্ষীয়ান ইসলামি দলের নেতা মত প্রকাশ করছিলেন যে, আমাদের বর্তমান সব সংকটের মূলে রয়েছে চরিত্রহীনতা, ন্যায়নীতি ও সততার অভাব।
প্রচলিত ধারণা হলো—জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও সম্পদের অভাবই অর্থনৈতিক সমস্যার মূল কারণ। আংশিক সত্য হলেও বাস্তবতা আরও গভীর। যদি শুধু সম্পদের অভাবই সমস্যার কারণ হতো তবে নাইজেরিয়ার মতো বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ দেশ দারিদ্র্যের নিচে থাকত না। আবার সিঙ্গাপুর—যার নিজস্ব সম্পদ বলতে প্রায় কিছুই নেই—কঠোর শাসন, সুশাসন ও সততার ভিত্তিতেই বিশ্বের ধনী দেশের সারিতে উঠে এসেছে।
নাইজেরিয়ার পতনের মূলে রয়েছে সীমাহীন দুর্নীতি। বলা হয় অফিসের টেবিলে পর্যন্ত ঘুষের হার লেখা থাকে। বিপরীতে সিঙ্গাপুরে লি কুয়ান ইউ দীর্ঘ তিন দশক ক্ষমতায় থেকেও নিজের চরিত্রে কালিমা লাগতে দেননি। তার সততা ও নৈতিকতা একটি দরিদ্র, দুর্নীতিগ্রস্ত দেশকে উন্নত, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করেছে।
আমাদের দেশেও আজ দুর্নীতি এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, মনে হয় সততার দুর্ভিক্ষ নেমে এসেছে। পত্রিকায় দেখলাম—২৫ হাজার টাকা বেতনের এক পেশকারের তিন কোটি টাকার বাড়ি! প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক পিয়নের ৪০০ কোটি টাকার সম্পদের কথা প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন। কর কর্মকর্তার ছেলের ১৫ লাখ টাকার ছাগল কেনার কাহিনিও দেশবাসীর অজানা নয়। এসব ঘটনা এখন আর মানুষকে বিস্মিত করে না।
সভ্য দেশে এ ধরনের অপরাধ প্রমাণিত হলে সরকার পড়েও যেতে পারে। অথচ এখানে এইসব দুর্নীতিবাজেরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়—ডাকাতি, ভূমিদখল, মাদক ব্যবসা পর্যন্ত নির্বিঘ্নে চালিয়ে যায়। তাদের লক্ষ্য একটাই—ক্ষমতা, অর্থ ও সামাজিক মর্যাদা। এ জন্য তারা শক্তিশালী দুর্নীতির চক্র গড়ে তোলে, যেখানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, এমনকি সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবীরাও জড়িত থাকে। সবচেয়ে বড় কথা—রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থাকা ব্যক্তিই যদি সৎ না হন, তাহলে নিচের স্তরে সততা টেকানো অসম্ভব।
ইসলামি দলের সেই নেতার কথায় তাই গভীর সত্য আছে—বাংলাদেশে সম্পদের অভাব নেই, অভাব আছে সৎ চরিত্রের। দেশ অসৎ মানুষের নয়; বরং অসৎ লোকদের দৌরাত্ম্যে সৎ মানুষের কণ্ঠস্বর ক্ষীণ হয়ে পড়ে। এক নামকরা গায়ক একসময় আক্ষেপ করে বলেছিলেন—“চেয়ারগুলো বেহায়াদের জন্যই বানানো।” যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ—বলা হয় ঠিকই, কিন্তু তা কি প্রকৃত নিয়ম? বাস্তবে দুর্নীতিবাজরাই অবৈধ টাকায় ক্ষমতার চেয়ার দখল করে, আর সেখান থেকে তারা আরও সুরক্ষিতভাবে অপকর্ম চালায়।
এই পরিস্থিতি বদলাতে হলে রাজনীতির আসনে সৎ, যোগ্য ও চরিত্রবান মানুষকে বসাতে হবে। রাজনীতির ভিত যদি সততা আর নৈতিকতার ওপর দাঁড়ায়, তাহলে বাকিটা ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের সম্ভাবনা অপরিসীম—অর্থনীতি থেকে সমাজের প্রায় সব ক্ষেত্রে। বিদেশে থেকে আমরা যারা দেশকে অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি, তারা এটি আরও স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করি।
সমস্যা সম্পদ নয়—সমস্যা চরিত্রের, মানসিকতার, আর সৎ মানুষের কণ্ঠরোধের। রাজনৈতিক নেতাদের ওলি-আউলিয়া ভাবার সুযোগ নেই। সভ্য দেশে একটি গুরুতর অপরাধই তাদের রাজনৈতিক জীবনের ইতি টানে। আমাদের দেশে এটিই সবচেয়ে বড় ঘাটতি।
এখনই সময়—হয়তো শেষবারের মতো—সততার দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে চরিত্রের ঐশ্বর্যকে সর্বাগ্রে প্রতিষ্ঠা করার।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
*লেখক বিভাগীয় প্রধান (ব্যবসা শিক্ষা), বাংলাদেশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাস্কাট, ওমান।
ইমেইলঃ <[email protected]>, ফেসবুকঃ Syed Ahsan

সোশ্যাল মিডিয়া আজ আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ছেলে-বুড়ো প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে এর প্রতি আসক্ত। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলে ইউটিউবারদের মধ্যে ভিউ, লাইক ও শেয়ার বাড়ানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়। সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে নানা তথ্য সমেত কন্টেন্টের বন্যা বইতে থাকে। এসবের মধ্যে অনেক কথাই থাকে অন্তঃসারশূন্য, আবার অনেকগুলোর উদ্দেশ্যও থাকে মতলবি—নিজেকে বা নিজের দলকে মহান হিসেবে তুলে ধরা।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ার একটি আলোচনা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। একজন বর্ষীয়ান ইসলামি দলের নেতা মত প্রকাশ করছিলেন যে, আমাদের বর্তমান সব সংকটের মূলে রয়েছে চরিত্রহীনতা, ন্যায়নীতি ও সততার অভাব।
প্রচলিত ধারণা হলো—জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও সম্পদের অভাবই অর্থনৈতিক সমস্যার মূল কারণ। আংশিক সত্য হলেও বাস্তবতা আরও গভীর। যদি শুধু সম্পদের অভাবই সমস্যার কারণ হতো তবে নাইজেরিয়ার মতো বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ দেশ দারিদ্র্যের নিচে থাকত না। আবার সিঙ্গাপুর—যার নিজস্ব সম্পদ বলতে প্রায় কিছুই নেই—কঠোর শাসন, সুশাসন ও সততার ভিত্তিতেই বিশ্বের ধনী দেশের সারিতে উঠে এসেছে।
নাইজেরিয়ার পতনের মূলে রয়েছে সীমাহীন দুর্নীতি। বলা হয় অফিসের টেবিলে পর্যন্ত ঘুষের হার লেখা থাকে। বিপরীতে সিঙ্গাপুরে লি কুয়ান ইউ দীর্ঘ তিন দশক ক্ষমতায় থেকেও নিজের চরিত্রে কালিমা লাগতে দেননি। তার সততা ও নৈতিকতা একটি দরিদ্র, দুর্নীতিগ্রস্ত দেশকে উন্নত, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করেছে।
আমাদের দেশেও আজ দুর্নীতি এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, মনে হয় সততার দুর্ভিক্ষ নেমে এসেছে। পত্রিকায় দেখলাম—২৫ হাজার টাকা বেতনের এক পেশকারের তিন কোটি টাকার বাড়ি! প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক পিয়নের ৪০০ কোটি টাকার সম্পদের কথা প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন। কর কর্মকর্তার ছেলের ১৫ লাখ টাকার ছাগল কেনার কাহিনিও দেশবাসীর অজানা নয়। এসব ঘটনা এখন আর মানুষকে বিস্মিত করে না।
সভ্য দেশে এ ধরনের অপরাধ প্রমাণিত হলে সরকার পড়েও যেতে পারে। অথচ এখানে এইসব দুর্নীতিবাজেরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়—ডাকাতি, ভূমিদখল, মাদক ব্যবসা পর্যন্ত নির্বিঘ্নে চালিয়ে যায়। তাদের লক্ষ্য একটাই—ক্ষমতা, অর্থ ও সামাজিক মর্যাদা। এ জন্য তারা শক্তিশালী দুর্নীতির চক্র গড়ে তোলে, যেখানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, এমনকি সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবীরাও জড়িত থাকে। সবচেয়ে বড় কথা—রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থাকা ব্যক্তিই যদি সৎ না হন, তাহলে নিচের স্তরে সততা টেকানো অসম্ভব।
ইসলামি দলের সেই নেতার কথায় তাই গভীর সত্য আছে—বাংলাদেশে সম্পদের অভাব নেই, অভাব আছে সৎ চরিত্রের। দেশ অসৎ মানুষের নয়; বরং অসৎ লোকদের দৌরাত্ম্যে সৎ মানুষের কণ্ঠস্বর ক্ষীণ হয়ে পড়ে। এক নামকরা গায়ক একসময় আক্ষেপ করে বলেছিলেন—“চেয়ারগুলো বেহায়াদের জন্যই বানানো।” যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ—বলা হয় ঠিকই, কিন্তু তা কি প্রকৃত নিয়ম? বাস্তবে দুর্নীতিবাজরাই অবৈধ টাকায় ক্ষমতার চেয়ার দখল করে, আর সেখান থেকে তারা আরও সুরক্ষিতভাবে অপকর্ম চালায়।
এই পরিস্থিতি বদলাতে হলে রাজনীতির আসনে সৎ, যোগ্য ও চরিত্রবান মানুষকে বসাতে হবে। রাজনীতির ভিত যদি সততা আর নৈতিকতার ওপর দাঁড়ায়, তাহলে বাকিটা ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের সম্ভাবনা অপরিসীম—অর্থনীতি থেকে সমাজের প্রায় সব ক্ষেত্রে। বিদেশে থেকে আমরা যারা দেশকে অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি, তারা এটি আরও স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করি।
সমস্যা সম্পদ নয়—সমস্যা চরিত্রের, মানসিকতার, আর সৎ মানুষের কণ্ঠরোধের। রাজনৈতিক নেতাদের ওলি-আউলিয়া ভাবার সুযোগ নেই। সভ্য দেশে একটি গুরুতর অপরাধই তাদের রাজনৈতিক জীবনের ইতি টানে। আমাদের দেশে এটিই সবচেয়ে বড় ঘাটতি।
এখনই সময়—হয়তো শেষবারের মতো—সততার দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে চরিত্রের ঐশ্বর্যকে সর্বাগ্রে প্রতিষ্ঠা করার।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
*লেখক বিভাগীয় প্রধান (ব্যবসা শিক্ষা), বাংলাদেশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাস্কাট, ওমান।
ইমেইলঃ <[email protected]>, ফেসবুকঃ Syed Ahsan
আমি দেখি এক তরুণের হাত/ পতাকা ছুঁয়ে থমকে যায়/ যেন এক মুহূর্তে/ ইতিহাস তার বুকে ঢুকে পড়ে/ ধুকধুক ধুকধুক করে।
আমার আজও মনে পড়ে/ আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায় নীল অপরাজিতার কথা/ মনে পড়ে কোকিলের গেয়ে চলা উচ্চাঙ্গ সংগীতের কথা/ মনে পড়ে বানভাসি মানুষের অজস্র দুঃখের কথা,
একটি সভ্য দেশে এ ধরনের বর্বরতা কখনোই কাম্য নয় এবং কখনো এটা আশা করিনি। অস্ট্রেলিয়া একটি শান্তিপূর্ণ দেশ; এখানে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আশা করা যায় না। ধর্মীয় বিদ্বেষ ধেকে এ ধরনের বর্বরোচিত হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। এ ধরনের ঘটনা শুধু ইহুদির জন্য নয়, আমাদের সবার জন্যই উদ্বেগজনক।
বাংলাদেশেরও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিদেশের মাটিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে, যা অনেকেরই অজানা। প্রতিষ্ঠানটির নাম বাংলাদেশ স্কুল মাস্কাট। এটি ইংরেজি মাধ্যম অ্যাডেক্সসেল কারিকুলামের অধীনে পরিচালিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ওমানের রাজধানী মাস্কাটের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই স্কুল।