logo
প্রবাসের খবর

সৌদিরা কফি আর আলাপচারিতার মাধ্যমে তাদের ঘরের দরজা খুলে দিচ্ছেন বিশ্বের মানুষের জন্য

বিডিজেন ডেস্ক
বিডিজেন ডেস্ক১ দিন আগে
Copied!
সৌদিরা কফি আর আলাপচারিতার মাধ্যমে তাদের ঘরের দরজা খুলে দিচ্ছেন বিশ্বের মানুষের জন্য
ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

সৌদি আরবের মানুষেরা কফি আর আলাপচারিতার মাধ্যমে তাদের ঘরের দরজা খুলে দিচ্ছেন বিশ্বের মানুষের জন্য।

সৌদিদের নতুন এই প্রবণতা নিয়ে বুধবার (৮ অক্টোবর) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল।

প্রতিবেদক সৌম্য গায়ত্রী লিখেছেন: এক উষ্ণ সেপ্টেম্বরের সন্ধ্যায় আমি পৌঁছাই রিয়াদের উত্তরাঞ্চলের আল ইয়াসমিন পাড়ার এক মনোরম বাড়িতে।

মজলিসটি যেন রাজকীয় নকশার এক নিদর্শন—সায়ান নীল সোফা, রুপালি ঝাড়বাতি আর বাতাসে ভেসে থাকা জাফরান ও এলাচের মাদক গন্ধ। কোণের এক পিতলের দাল্লাহ থেকে ধীরে ধীরে ফুটছে কফি; টেবিলজুড়ে সাজানো তাজা খেজুর ও মিষ্টি বাসবুসা। এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশেই আমি সাক্ষাৎ করি সন্ধ্যার আতিথ্যদাত্রী ফাতিমা অলিয়ানের সঙ্গে।


হাইহোম: সৌদি সংস্কৃতি জানার এক নতুন জানালা

সোনালি নকশা করা সাদা আবায়া পরিহিতা ফাতিমা অলিয়ান রিয়াদের সেইসব উদার আতিথ্যদাতাদের একজন, যারা নিজেদের ঘর পর্যটক ও প্রবাসীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।

এই উদ্যোগটি জনপ্রিয় হয়েছে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হাইহোমের মাধ্যমে, যা পর্যটকদের সৌদি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে কাছ থেকে জানার সুযোগ দেয়। সাধারণত দুই থেকে তিন ঘণ্টার এই সফরে থাকে স্থানীয় বাড়ি ও খামার ভ্রমণ, রান্নার ক্লাস, ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা, শিল্প-সংস্কৃতি অন্বেষণ এবং সৌদি পরিবারের সঙ্গে সরাসরি মিথস্ক্রিয়া।

২০১৯ সালে রিয়াদের তরুণ উদ্যোক্তা নুরাহ আলসাদউন প্রতিষ্ঠা করেন হাইহোম। তার লক্ষ্য ছিল—বিশ্বের সামনে সৌদি সংস্কৃতির সৌন্দর্য ও আন্তরিকতাকে তুলে ধরা।
তিনি বলেন, ‘আমার ভ্রমণগুলোতে সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্তগুলো হোটেল বা দর্শনীয় স্থানে নয়, বরং মানুষের ঘরে—যখন আমরা একসঙ্গে গল্প করেছি, খাবার ভাগ করেছি, ঐতিহ্য শিখেছি।’

আজ হাইহোম সৌদি আরবের ২৪টি শহর ও অঞ্চলে সক্রিয়, যেখানে ২০০-রও বেশি অভিজ্ঞতা অফার করা হয়। ১০০-রও বেশি স্থানীয় আতিথ্যদাতা ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছেন এবং আরও অনেকে আগ্রহী। আলসাদউনের ভাষায়, ‘সৌদিরা তাদের ঘরবাড়ি, হস্তশিল্প ও ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করে। আতিথেয়তা তাদের কাছে শুধু আয়ের উপায় নয়, এটি এক ঐতিহ্য রক্ষার আনন্দময় মাধ্যম।’


ফাতিমা অলিয়ানের ঘরে সৌদি সংস্কৃতির জীবন্ত ছোঁয়া

অলিয়ান শিশুসুলভ উৎসাহে আমাকে যখন তার বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন, তখন তার উচ্ছ্বাস সংক্রামক মনে হচ্ছিল। হাসতে হাসতে বললেন, ‘আমি সারা বিশ্বের অতিথিদের আতিথ্য করতে ভালোবাসি—তাদের সঙ্গে আমাদের খাবার, ঐতিহ্য ও আচার ভাগ করে নিতে দারুণ লাগে। এটা আমাকে অপরিসীম আনন্দ দেয়।’

দুই ঘণ্টার ভ্রমণে আমার ১২ বছর বয়সী ছেলে ও আমি অলিয়ান ও তার মেয়ে নাদার সঙ্গে গল্পে মেতে উঠি। আমরা সৌদি স্টাইলে গাহওয়া বানানো শিখি, খাই ঘরে তৈরি খেজুর ও কুকি-ভর্তি মিষ্টান্ন। আমি পরি সোনালি নকশা করা আবায়া ও ঝুলন্ত মুদ্রা-অলংকৃত হামা, আর আমার ছেলে পরে ঐতিহ্যবাহী বিশত ও ঘুতরা।

অলিয়ান আমাদের দেখান তার শিল্প ও পুরনো সংগ্রহ—নাজদি ও আসিরি শিল্পকর্ম, রূপার বাতি, আরবি কফি সেট, বেদুইন গয়না—যা তার ঘরকে পরিণত করেছে এক ছোট্ট জাদুঘরে। তার বাড়ি ঘুরে দেখা মানে যেন সৌদি ইতিহাসের পাতাগুলো উল্টে দেখা।

তিনি হেসে বলেন, ‘মানুষ আমার বাড়ি ভালোবাসে; তারা ছবি তোলে, আর ফিরে আসতে চায়।’

KSA 2


রান্না, শিল্প ও অতিথিপরায়ণতার অনন্য সমন্বয়

ব্যক্তিগত সংগ্রহ ও ঐতিহ্যবাহী সাজসজ্জায় ভরা বাড়ির ট্যুর, ঐতিহ্যবাহী দরজার চিত্রাঙ্কন বা আল-কাত আল-আসিরি শিল্পের কর্মশালা—সবই পর্যটকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়।
এ ছাড়া, স্থানীয় পরিবারের সঙ্গে একসঙ্গে রান্না শেখা এবং শেষে দুপুর বা রাতের ভোজ—এগুলোও অতিথিদের প্রিয়তম অভিজ্ঞতাগুলোর একটি।

আমাদের ভ্রমণ শেষ হয় পাঁচ পদবিশিষ্ট সৌদি এক ভোজে—মসুর ডাল স্যুপ, সালাদ, ওয়ারাক এনাব, চিকেন মান্দি, পটেটো সুফলে, ঠান্ডা পানীয় ও বাসবুসা। অলিয়ান এমনকি আমাদের জন্য কিছু খাবার প্যাক করে দিয়ে বললেন, ‘আমার অতিথিরা সবসময় বলে, এমন স্বাদ কোনো রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় না।’

তার কথার সত্যতা আমি নিজেই নিশ্চিত করতে পারি—কারণ সেই চিকেন মান্দি ও বাসবুসা রিয়াদে খাওয়া অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে অনন্য।


সৌদি আতিথেয়তার হৃদয়ে এক মানবিক স্পর্শ

কয়েক দিন পর সেই ভ্রমণের কথা মনে পড়লে, খাবার বা সাজসজ্জার চেয়ে বেশি মনে থাকে অলিয়ানের আন্তরিকতা। তার বসার ঘরে বসে গল্প শোনা, গাহওয়ার কাপ হাতে হাসাহাসি—সবকিছুই ছিল একান্ত, হৃদয়স্পর্শী অভিজ্ঞতা।
আলসাদউন বলেন, ‘আমাদের ট্যুরে কোনো স্ক্রিপ্ট বা সাজানো দৃশ্য নেই—এখানে থাকে কেবল সত্যিকারের সৌদি পরিবার, যারা তাদের জীবন ভাগ করে নেয়। এই আন্তরিকতাই সৌদি আরবকে অবিস্মরণীয় করে তোলে।’

যখন সৌদি আরব দ্রুত পরিবর্তনের পথে—উঁচু অট্টালিকা, বিলাসবহুল মল ও আধুনিক জাদুঘর গড়ে উঠছে—তখন অলিয়ানের মতো অভিজ্ঞতা পর্যটকদের যুক্ত রাখে এই দেশের সাংস্কৃতিক হৃদয়ের সঙ্গে।

শতাব্দীব্যাপী ইতিহাস, প্রজন্মান্তর ধরে টিকে থাকা রান্নার রেসিপি ও সমৃদ্ধ শিল্প-হস্তশিল্পের মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা এসব অভিজ্ঞতা কেবল ঐতিহ্যের প্রদর্শনী নয়—এগুলো মানুষে-মানুষে সত্যিকারের বন্ধন সৃষ্টি করে।

আর এই সংযোগই দর্শনার্থীদের মনে রেখে যায় এমন স্মৃতি, যা ভ্রমণ শেষ হলেও দীর্ঘদিন মুছে যায় না।

আরও পড়ুন

প্রবাসীদের দৃষ্টিতে এশিয়ার সেরা ৩ দেশ

প্রবাসীদের দৃষ্টিতে এশিয়ার সেরা ৩ দেশ

এ বছর সূচকে চীনের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। ২০২৪ সালে ১৯তম অবস্থান থেকে উঠে এসে এবার ৬ষ্ঠ হয়েছে দেশটি। অন্যদিকে মালয়েশিয়া প্রথমবারের মতো শীর্ষ ১০-এ প্রবেশ করেছে। ভিয়েতনাম রয়েছে ৫ম স্থানে।

১ দিন আগে

সৌদিরা কফি আর আলাপচারিতার মাধ্যমে তাদের ঘরের দরজা খুলে দিচ্ছেন বিশ্বের মানুষের জন্য

সৌদিরা কফি আর আলাপচারিতার মাধ্যমে তাদের ঘরের দরজা খুলে দিচ্ছেন বিশ্বের মানুষের জন্য

সোনালি নকশা করা সাদা আবায়া পরিহিতা ফাতিমা অলিয়ান রিয়াদের সেইসব উদার আতিথ্যদাতাদের একজন, যারা নিজেদের ঘর পর্যটক ও প্রবাসীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এই উদ্যোগটি জনপ্রিয় হয়েছে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হাইহোমের মাধ্যমে, যা পর্যটকদের সৌদি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে কাছ থেকে জানার সুযোগ দেয়।

১ দিন আগে

আবুধাবিতে প্রবাসী বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের বিশেষ টেকনিক্যাল সেশন

আবুধাবিতে প্রবাসী বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের বিশেষ টেকনিক্যাল সেশন

টেকনিক্যাল সেশনটি অভ্যন্তরীণ পরিবেশগত মানের সঙ্গে সম্পর্কিত আলোক নকশায় সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ এবং উদ্ভাবনী সমাধান নিয়ে আলোচনার জন্য একটি বিস্তৃত প্ল্যাটফর্ম প্রদান করেছে।

২ দিন আগে

সিডনিতে দর্পণ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে দুর্গাপূজা্

সিডনিতে দর্পণ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে দুর্গাপূজা্

অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলথ রাজ্যের সিডনিতে দর্পণ কালচারাল অ্যান্ড রিলিজিয়াস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজনে ধুমধাম করে অনুষ্ঠিত হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা্।

৪ দিন আগে